কর্নিয়া সংকটের কারণে থমকে আছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চোখের অস্ত্রোপচার। একাধিকবার তারিখ পরিবর্তন করেও কাঙ্ক্ষিত সার্জারি করাতে পারছেন না আহতরা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের চোখের অবস্থা দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। অন্ধ হওয়ার শঙ্কাও বাড়ছে অনেকের। তাই জরুরিভাবে কর্নিয়ার ব্যবস্থা করে আহতদের অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, হাসপাতালটির চতুর্থ তলায় চারটি কক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালটিতে বর্তমানে প্রায় ২০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই কর্নিয়া সার্জারির অপেক্ষায় রয়েছেন। আবার অনেকেই পূর্ব নির্ধারিত তারিখে হাসপাতালে এসেও কর্নিয়া সার্জারি করতে না পেরে ফেরত যাচ্ছেন। আহতরা জানান, রেটিনা পর্যায়ের সার্জারি পর্যন্ত যথাযথ চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে। তবে কর্নিয়া সার্জারির ক্ষেত্রে বিলম্ব করা হচ্ছে। আহতদেরকে বারবার ঘোরানো হচ্ছে। কর্নিয়া না থাকায় সার্জারি করা যাচ্ছে না বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে। কর্নিয়া অপারেশন করতে না পারলেও রেটিনা অপারেশনের সেলাই কাটার প্রয়োজন। এর ফলে অনেকেই চোখে ঝাপসা দেখছেন। কিন্তু চিকিৎসকরা চোখের সেই সেলাই কাটছেন না। হাসপাতালটিতে কর্নিয়া অপারেশনের অপেক্ষায় আছেন টাঙ্গাইল এম এম কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খোকন আহমেদ। তিনি গতকাল এ প্রতিবেদককে অনেকটা কষ্টের সঙ্গে বলেন, ‘আমার বাম চোখে ছড়রা গুলি আঘাত করে। চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা সার্জারি করে গুলি বের করেন। সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ আমাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। তখন ডাক্তার বলে, ‘কর্নিয়া অপারেশন করতে হবে। আপনি ১০ দিন পরে আসেন।’ নির্ধারিত দিনে এলে ডাক্তার আবার ১৫ দিন পরে আসতে বলেন। আজ (গতকাল) আবার ডাক্তারের কাছে এসেছি। এখনো আমার চোখে সেলাই কাটা হয়নি, এজন্য চোখ চুলকায়। চোখ চুলকানোর বিষয়ে ডাক্তারকে জানালে তারা আবার দুই সপ্তাহ পরে আসতে বলেন। অপারেশন তো হচ্ছে না। ডাক্তাররা শুধু শুধু ঘুরাচ্ছে। আমার সার্জারি কবে হবে তা জানি না।’
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে কর্নিয়া নেই। এজন্য ডাক্তাররা আমাদেরকে ঘুরাচ্ছেন।
সরকার যদি আমাদের জন্য কর্নিয়ার ব্যবস্থা না করতে পারে তাহলে আমাদের চোখ ড্যামেজ ঘোষণা করে দিক। সরকার পরিবর্তন হলে আমরা পরবর্তীতে আর চিকিৎসা পাব কি না জানি না। এই সরকারকেই আমাদের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। মিজানুর রহমান নামের আরেক আহত শিক্ষার্থী বলেন, আমার চোখে ইতোমধ্যে দুবার সার্জারি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছের কর্নিয়া সার্জারি করতে হবে। কিন্তু হাসপাতালে বর্তমানে কর্নিয়া নেই। এজন্য সার্জারি হচ্ছে না। তাই হাসপাতালেই পড়ে আছি। এ বিষয়ে জানতে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।