নিম্নচাপের রেশ কাটতে না কাটতেই কার্তিকের শুরুতে বঙ্গোপসাগরে ফের একটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। লঘুচাপটির বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এ অবস্থায় আগামী দুই দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির শঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গতকাল ৭২ ঘণ্টার দেওয়া আবহাওয়ার এক পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘আগামী সোম বা মঙ্গলবারের দিকে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পরে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যেটা দেখতে পাচ্ছি, এটি ভারতের ওড়িশা বা পশ্চিমবঙ্গের দিকে আঘাত হানতে পারে। তবে গতিপথ পরিবর্তন করে বাংলাদেশেও আঘাত হানার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’ তিনি বলেছেন ঘূর্ণিঝড়টির নাম হতে পারে ‘ডানা’।
গত বুধবার থেকেই সাগরে একটি লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হয়। সেটি ভারতের তামিলনাড়ু উপকূলে বেশি প্রভাব ফেলে বৃহস্পতিবার বিদায় নেয়। সকালের আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে ঢাকায় বৃষ্টি ঝরেছে। এ ছাড়া খুলনা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও বরিশালের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বৃষ্টিপাত শনিবারও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক। এরপর ২-৩ দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারপর লঘুচাপের প্রভাবে আবারও বৃষ্টি হতে পারে। গেল ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে দেশের সর্বোচ্চ ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ ছাড়া উত্তরের জেলা রাজশাহী বিভাগের তাড়াশে ২৮, বগুড়ায় ২৬, ঢাকার আরিচায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করার তথ্য দিয়েছে অধিদপ্তর।
অক্টোবর মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এবার অক্টোবরের প্রথমার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ধীরে ধীরে বিদায় নেবে। সেই সঙ্গে এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে তিনটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে, যার মধ্যে একটি নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। সর্বশেষ গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ বাংলাদেশ উপকূল ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে।
আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়। মে মাসে রিমালের পর আরব সাগরে আগস্টে ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’ সৃষ্টি হয়। ‘রিমাল’ নামটি প্রস্তাব করে ওমান। আর ‘আসনা’ ছিল পাকিস্তানের দেওয়া নাম। এবার তালিকায় রয়েছে কাতারের দেওয়া নাম ‘ডানা’। এ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় রূপ নিলে এর নাম হবে ‘ডানা’। তারপর গতি-প্রকৃতি দেখে কখন কোথায় আঘাত হানতে পারে-সে পূর্বাভাস দেবে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির পর ধাপগুলো হচ্ছে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ হয়ে ঘূর্ণিঝড়।
এর আগে গেল বছর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম, যা পরে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। সে ঝড়ের তেমন কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি।