বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

'ছাতকী কমলা' এখন মৌলভীবাজারে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

'ছাতকী কমলা' এখন মৌলভীবাজারে

বিলুপ্ত প্রায় ছাতকী কমলা নতুন ব্র্যান্ড নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে মৌলভীবাজারের পাহাড়ি অঞ্চলে। আমদানীকৃত বিদেশি কমলার পাশাপাশি দেশজ এ কমলা বাজারজাত হচ্ছে বিভিন্ন মোকামে। ৪-৫ দশক আগেও সিলেট অঞ্চলের ছাতকী কমলা নিজ বৈশিষ্ট্য গুণে বাজারে আধিপত্য ধরে রেখেছিল। রসে ভরা এবং ঘ্রাণসম্পন্ন ছাতকী কমলার চাহিদা ছিল আন্তর্জাতিক পরিসরেও। কিন্তু প্রাকৃতিক বৈরীপনা, টিলা ধ্বংস করে স্থাপনা নির্মাণসহ বিকল্প চাষাবাদের পরম্পরায় ছাতক, জৈন্তা, গোয়াইন ঘাট ও বিয়ানীবাজার এলাকায় কমলা চাষাবাদে সূচিত হয় ভাঁটার টান। অন্য দিকে বিলুপ্ত প্রায় ছাতকী কমলার কাটিং ও চাঁরা সংগ্রহ করে মৌলভীবাজারের পাহাড়ি এলাকায় কমলা চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয় বিক্ষিপ্তভাবে। মাটির গুণ ও পরিচর্যার অকৃপণতায় এখানে কমলা চাষের সম্ভাবনাময় দিগন্তের উন্মোচন ঘটে। কমলাচাষের প্রক্রিয়া ক্রমেই প্রসার লাভ করে বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়াতে। বর্তমানে জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি, পূর্ব জুড়ী, ফুলতলা, সাগরনাল এবং জায়ফরনগরের ৯৮ হেক্টর টিলা ভূমিতে কমলার বাগান গড়ে উঠেছে। একইভাবে বড়লেখার দক্ষিণ শাহাবাজপুর, বড়লেখা সদর, দক্ষিণ ভাগ ও নিজ বাহাদুর পুর ইউনিয়নে ৭৮ হেক্টর এবং কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা, ভাটেরা ও পৃথিমপাশায় ১৩ হেক্টর জমিতে কমলা চাষাবাদ হচ্ছে। উল্লিখিত তিনটি উপজেলাতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ৩৮টিরও অধিক কমলাবাগান গজিয়ে উঠেছে। বিক্ষিপ্তভাবে কমলা ও মাল্টা চাষাবাদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলাতে। এই মৌসুমে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠা কমলা বাগান থেকে কমলা বাজারজাত করা হচ্ছে স্থানীয় বাজারসহ অন্যান্য এলাকায়। প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক প্রয়োগ, বিষডাল ছাটানো এবং জল সেচ হচ্ছে কমলা চাষের প্রধান শর্ত। তার পাশাপাশি কমলা পুষ্টির সহায়ক হচ্ছে সৌরালোক এবং কুয়াশার যোগসাজশ। ফুল থেকে গুটি ধরার পর কমলা বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে দিনে প্রয়োজনীয় সৌরালোক এবং রাতে হিমেল বাতাসের সঙ্গে কুয়াশার আচ্ছাদন প্রোয়জন। দিনের সৌরালোকের পাশাপাশি এবার আগস্ট মাস থেকে রাতে কুয়াশার প্রলেপ থাকায় কমলা চাষাবাদের ক্ষেত্রে ছিল অনুকূল আবহ। প্রতিটি গাছে কমলার গড় উত্পাদন ১৫০টি ধরে এবার কৃষি বিভাগ কমলার মোট উত্পাদন নির্ধারণ করেছিল ১.৮ টন। কিন্তু পুরানো কমলা গাছে কমলা ধরেছে ৩০০টির অধিক। এ হিসেবে উৎপাদনের মাত্রা ২টন ছাড়িয়ে যাবে। জুড়ীর গোয়ালবাড়ি এলাকার কমলা চাষী আজহার আলী জানান, এবার কমলার ফলন হয়েছে বেশি, দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। তিনি বলেন, 'কমলা চাষাবাদ হচ্ছে ধৈর্য্যের ব্যাপার। আমাদের চাষীরা ৪-৫ মাসের মাথায় ফসল পেতে আগ্রহী। কিন্তু কমলা গাছে ফল ধরে ৬-৭ বছর পর। তারপরও অনেকে কমলা চাষে এগিয়ে আসছে।'
জানা গেছে, গত ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে সরকারি উদ্যোগে হাতে নেয়া হয়েছিল কমলা চাষ প্রকল্প। প্রকল্প অনুসারে বিনা মূল্যে চাষীদেরকে চারা, সার ও কীটনাশক সরবরাহের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ঋণ বরাদ্দ করা হত। এ প্রকলেপর মেয়াদ শেষ হবার পর আর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।


বিডি-প্রতিদিন/১০ ডিসেম্বর ২০১৫/শরীফ

 

সর্বশেষ খবর