৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০৯:৪৬

পিপলএনটেকের মিলিয়ন ডলারের স্কলারশিপ

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে :

পিপলএনটেকের মিলিয়ন ডলারের স্কলারশিপ

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেই মার্কিন আইটি সেক্টরে সোয়া লাখ ডলার বেতনের চাকরি পেয়েছেন চাঁদপুরের সন্তান জাহিদুল ইসলাম। কম্পিউটার সায়েন্স বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তার কোন অভিজ্ঞতাও ছিল না। প্রকৃত অর্থে তিনি ছিলেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। জাহিদুল ইসলামের মত আরো অনেকেই মার্কিন আইটি সেক্টরে কাজের অফারসহ ইমিগ্র্যান্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পথে রয়েছেন। আর যারা ইমিগ্রেশনের লাইনে নেই, তারা বাংলাদেশে থেকেই আউটসোর্সিং করছেন এবং উচ্চ বেতন পাচ্ছেন। এসব এখন আর স্বপ্ন বা কল্পনা নয়। একেবারেই বাস্তব। তথ্য-প্রযুক্তির সুবাদে মেধাবি এবং উদ্যমী বাংলাদেশিদের জন্যে এমন সুযোগ তৈরী করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পিপলএনটেক ইন্সটিটিউট।
গত দেড় দশকে এই সংস্থাটি প্রবাসে ৫ হাজার বাংলাদেশিকে উচ্চ বেতনে আইটি সেক্টরে চাকরির সহযোগিতার পরিধির সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে রাজধানী ঢাকায়। গ্রীনরোড এবং পান্থপথের কর্নারে স্থাপন করেছে পিপলএনটেকের ক্যাম্পাস। সেখানে আইটি সেক্টরের লোভনীয় চাকরির যাবতীয় প্রস্তুতি শেখানো হচ্ছে। ৪ মাসের একেকটি কোর্সে আড়াই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ক্লাস নিচ্ছেন। এর অধিকাংশই পারিবারিক অথবা অন্য কোন প্রোগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন। অর্থাৎ ঢাকা থেকে উড়াল দেয়ার পর জেএফকে এয়ারপোর্টে অবতরণ করেই তারা জাহিদের মত চাকরিতে যোগদান করবেন বলে আশা করছেন। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়াতে পিপলএনটেক ইন্সটিটিউটের প্রধান কার্যালয়। নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, কানাডা এবং ভারতেও এর শাখা রয়েছে। অর্থাৎ দিন যত যাচ্ছে, পিপলএনটেকের প্রতি উদ্যমী আর মেধাবিদের নির্ভরতাও বাড়ছে।
৪ মাসের একটি কোর্সের ফি ৪ হাজার ডলার করে। তবে অনেকেই ফ্রি কোর্স করার সুবিধাও পাচ্ছেন। আর এই সুবিধাকে আরো সম্প্রসারণ ঘটানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন পিপলএনটেকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিপ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রি নেন আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের স্বার্থে। এখন তার ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রির সাথে কোনই সম্পর্ক নেই। পুরোদস্তর কম্প্যুটার ইঞ্জিনিয়ার।
১ এপ্রিল রবিবার অপরাহ্নে নিউইয়র্কে পিপলএনটেক ক্যাম্পাসে আহূত এক সংবাদ সম্মেলনে আবু হানিপ বলেন, পয়সা উপার্জনের পাশাপাশি স্বদেশীদের স্বপ্ন পূরণেও সহায়তা করতে চাই। এজন্যে চলতি বছর মিলিয়ন ডলারের বৃত্তি ঘোষণা করছি। ২৫০ জন উদ্যমী বাংলাদেশী পাবেন এই সুযোগ। ৪ মাসের কোর্স তারা বিনা ফি-তে শিখবেন এবং উচ্চ বেতনের চাকরির জন্যে প্রস্তুত হবে। এ বৃত্তির জন্যে আবেদন জানাতে হবে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে। আবেদনে আগ্রহীদের অবশ্যই ব্যাচেলর ডিগ্রিধারি এবং তথ্য-প্রযুক্তির সাথে সম্পর্ক থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে কাজের পারমিট থাকতে হবে। ইংরেজীতে কথা বলার যোগ্যতা থাকতে হবে। আবেদনকারিদেরকে মৌখিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ার হানিফ বলেন, এই আড়াই শ’ জনের কোর্স দিতে মোট এক মিলিয়ন ডলার ফি লাগতো। সেটি নিচ্ছি না। এমনকি চাকরি খুঁজে দিতেও আমরা সহায়তা দেব। আমি চাই, মেধাবি এবং উদ্যমী বাংলাদেশিরা অডজব থেকে মুক্তি পাক। হানিফ উল্লেখ করেন, মাইক্রোসফ্ট, গুগল, আমাজন, ওয়ালমার্ট, ই-বে, আপেল, ওরাকল, আইবিএম ইত্যাদি খাতনামা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে রয়েছেন, যাদের অনেকেই পিপলএনটেকে কোর্স নিয়েছেন। এসব দেখে ও জেনে আমি অভিভূত হই।
এ প্রসঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের ড. সাইদ সিদ্দিক হোসেন বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির এ যুগে কেউই অভিজ্ঞতার ব্যাপারে ততটা আন্তরিক নয়, তারা শুধু দক্ষতা ক্রয় করে। পিপলএনটেক সে দক্ষতা শেখাচ্ছে পরিপূর্ণভাবে। ড. সাইদ বলেন, পিপলএনটেকে কোর্স করার সময় যারা মনোযোগী হন তারাই সহজে চাকরি পেয়ে যান। অর্থাৎ ৪ মাসের কোর্স করার সময় সবকিছু ভুলে থাকতে হবে। কারণ, সবকিছু মগজে ধারণ করতে হয় কর্মজীবনে প্রবেশের স্বার্থে। তিনি বলেন, আমরা সবকিছু হাতেকলমে শিখিয়ে দেই। যারা বিভিন্ন কর্পোরেশনে কাজ করছেন তারাই এখানে ক্লাস করান। অর্থাৎ সরাসরি অভিজ্ঞরা ছাত্রদের সঠিক ধারণা প্রদান করছেন।
পিপলএনটেকের প্রেসিডেন্ট ফারহানা হানিপ এ সময় বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের যত সাফল্য এবং ব্যাপ্তি-সবকিছুর মূলে মিডিয়ার সহযোগিতা। আমাদের এখানে কোর্স নিয়ে অনেকেই নামী-দামি কোম্পানীতে চাকরি করছেন। এসব আমাদেরকে উৎসাহিত করে আরো বেশী কাজে। কয়েকমাস আগে আমি নিজেও একটি কোম্পানীতে কাজ নিয়েছি। সেখানেও আমাদের এখানে কোর্স নেয়া কয়েকজন পেয়ে অভিভূত হই। ঐ কোম্পানীর বড়কর্তারাও জানেন পিপলএনটেকের সুনাম।
এক পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ফারহানা হানিপ বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে যারা কোর্স নেন-তারা আমার সন্তানের মত। সেভাবেই আমরা তাদেরকে বিবেচনায় রেখে উচ্চ বেতনের চাকরিতে সহায়তা দিচ্ছি। কেউ যখন মার্কিন কোম্পানীতে চাকরি লাভ করেন, তা জেনে সবচেয়ে বেশী খুশী হই আমি।
মৃদুভাষী ফারহানা উল্লেখ করেন, ভোর ৫টায় উঠে নামাজ শেষে বাংলাদেশের লোকজনের সাথে কথা বলি। সেখানে যারা পিপলএনটেকের পক্ষে কোর্স দিচ্ছেন কিংবা আউটসোর্সিং করছেন, তাদের হালচাল জানার পরই যুক্তরাষ্ট্রের খোঁজ-খবর নেই। একইভাবে সিইও ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিপও দিন-রাতের অথিকাংশ সময় ব্যয় করেন এই সংস্থার উন্নয়ন তথা কোর্স গ্রহণকারিদের সার্বিক মঙ্গলের জন্যে।
নানা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের পর আবু হানিপ বলেন, একেকজন ৮০ হাজার ডলার থেকে দু’লাখ ডলার বেতনের জব করছেন। অর্থাৎ আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের পথে অনেক অগ্রগতিসাধিত হচ্ছে। আর এর সুফল শুধু প্রবাসীরাই পাচ্ছেন না, স্বদেশে তাদের আত্মীয়-স্বজনেরাও ভোগ করছেন। বেড়ে গেছে রেমিটেন্সের পরিমাণও। অর্থাৎ পিপরএনটেক প্রকারান্তরে জাতীয় অগ্রগতিতেও অবদান রেখে চলেছে অত্যন্ত নিরবে। আবু হানিফ বলেন, ঢাকাস্থ ক্যাম্পাসে কোর্স নেয়ার পর আড়াই শতাধিক বাংলাদেশি আউটসোর্সিং করছেন এবং পাচ্ছেন মোটা অংকের বেতন। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নেপালি, জাপানী, শ্রীলংকান, পাকিস্তানীরাও কোর্স নিয়ে অডজব ছাড়তে সক্ষম হয়েছেন।
এক বছরে আড়াই শতজনকে বৃত্তি দিলে আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার আসবে কোত্থেকে-এমন এক প্রশ্নের জবাবে আবু হানিপ বলেন, জীবনে অর্থই একমাত্র প্রত্যাশা হওয়া উচিত নয়। স্বদেশীদের আর্থিক স্বয়ম্ভরতা দিতে পারলে আমি আরো বেশী খুশী হই। সকলেই প্রিয়-পরিচিতজন ছেড়ে সুদূর এ প্রবাসে এসেছি ভাগ্য গড়তে। সেটি পূরণে ন্যূনতম সহায়তা করতে পারলেও আমি এবং আমার টিম খুশী হবে। এই প্রতিষ্ঠানের সকলেই আমরা পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছি। এজন্যে মিলিয়ন ডলারের বৃত্তির পরও আমাদের কোন সমস্যা হবে বলে মনে করছি না।  
নিজের কর্মপরিধি-সাফল্য ইত্যাদি আলোকে উচ্ছাস প্রকাশ করে আবু হানিপ বলেন, ‘আমি চেষ্টা করছি নিজের নাম ‘হানিপ’কে ‘হেলপ’র বিকল্প করতে। দিন-রাত প্রায় ২৪ ঘণ্টাই আমার এখানে কোর্সগ্রহণকারিদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে, পরামর্শ দিতে হচ্ছে, তাই হেলপ শব্দের বিকল্প ‘হানিপ’ হলে মন্দ কি?
দীর্ঘ দেড় দশকের অভিজ্ঞতার আলোকে ইঞ্জিনিয়ার হানিপ আরো বলেন, বাংলাদেশের পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসে অডজবের মধ্য দিয়ে অনেকেই ‘ব্রেন-ড্রেন’র অপবাদ সহ্য করেছেন, করছেন। আমি সেটিকে পাল্টিয়ে ‘ব্রেন এগেইন’ করেছি। অডজব থেকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর