শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বিশ্বের যত প্রাচীন মসজিদ

মসজিদ মুসলমানদের পবিত্র স্থান। যার মাধ্যমে প্রসার ঘটেছে ইসলামের। প্রাচীন এসব স্থাপত্যের মসজিদগুলো ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি ঐতিহাসিকভাবেও প্রসিদ্ধ। প্রাচীন মসজিদগুলোর নির্মাণশৈলী, আয়তন ও ইতিহাস মানুষকে করেছে বিস্মিত। বিশ্বের প্রাচীন মসজিদ নিয়ে শুক্রবারের রকমারি।

আবদুল কাদের

বিশ্বের যত প্রাচীন মসজিদ

মসজিদ আল-হারাম

[সৌদি আরব]

মহানবী (সা.)-এর মক্কা বিজয়ের পর থেকে ৬৯২ সাল

ইতিহাসের সাক্ষী ‘মসজিদ আল-হারাম’। ইসলামের পবিত্র স্থান, যা পবিত্র কাবাকে ঘিরে অবস্থিত। মুসলিমরা নামাজের সময় কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়ান। প্রতি বছর হজের মৌসুমে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানব সমাবেশ ঘটে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে অবস্থিত এই মসজিদে। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ২১৩০ সালের দিকে পবিত্র কাবা নির্মাণ করা হয়। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে, মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.) একত্রে কাবা শরিফ নির্মাণ করেন। পূর্বে কাবাকে কেন্দ্র করে একটি খোলা স্থানই ছিল মসজিদ। কালের বিবর্তনে একটু একটু করে মসজিদ আল- হারামের নির্মাণ কাজ হয়। ৬৯২ সালে প্রথম ছাদসহ দেয়াল দিয়ে মসজিদটি ঘিরে দেওয়া হয়। ১৫৭০ সালে উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় সেলিম প্রধান স্থপতি মিমার সিনানকে মসজিদ পুনর্র্নির্মাণের আদেশ দেন। এই সময় সমতল ছাদগুলোর বদলে ক্যালিওগ্রাফি সংবলিত গম্বুজ ও নতুন স্তম্ভ স্থাপন করা হয়। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে সাফা ও মারওয়াকে মসজিদের দালানের মধ্যে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে মসজিদ আল-হারামের মোট আয়তন ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ বর্গমিটার। ভিতরে ও বাইরে নামাজের স্থান মিলে পবিত্র মসজিদের কাঠামো প্রায় ৮৮.২ একর। এই মসজিদের ৮১টি দরজার প্রত্যেকটি সব সময় খোলা থাকে। এখানে একসঙ্গে ১০ লাখ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ মসজিদের ধারণক্ষমতা ২০ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেন। যার সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে, ২০২০ সালে মসজিদ আল হারামের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কভিড-১৯ মহামারীর কারণে এখনো কাজ শেষ হয়নি। ২০১৫ সালে বাদশাহ মারা যাওয়ার পর তাঁর উত্তরসূরি সালমান বিন আবদুল আজিজ এই সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছেন। ব্রিটেনের বিখ্যাত আবাসন কোম্পানি ‘হোমস অ্যান্ড প্রপার্টি’র তথ্য মতে, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ও দামি স্থাপনার মধ্যে  মসজিদ আল-হারাম শীর্ষে।

সৌদি আরব (৬২২ সাল)

মসজিদুল কুবা

ইসলামী ইতিহাসের সবচেয়ে ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ মসজিদ ‘মসজিদে কুবা’। কথিত আছে, মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করলে ওমরাহর সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম নির্মিত মসজিদ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় মদিনার অদূরে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। মক্কা শরিফ থেকে ৩২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত এই কুবা নগরীতে মসজিদে কুবা অবস্থিত। ‘কুবা’ একটি কূপের নাম। আর এই কূপকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে কুবা নগরী। প্রতিষ্ঠার পর উসমান বিন আফফান (রা.), ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.), উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ও তাঁর ছেলে প্রথম আবদুল মাজিদ প্রমুখ শাসকরা মসজিদটির সংস্কার কাজ করেন। বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সময় সর্বশেষ মসজিদটির সম্প্রসারণ করা হয়। মসজিদে কুবার বর্তমান আয়তন ১৩ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। এখানে ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদে কুবার মূল আকর্ষণ বিশাল গম্বুজ এবং চার কোণায় চারটি সুউচ্চ মিনার। ১৯৮৬ সালে সর্বশেষ মসজিদের পুনর্র্নিমাণকালে এক ধরনের সাদা পাথর ব্যবহার করা হয়। মসজিদের চতুর্দিকের সুবজ পাম  গাছের বলয় মসজিদটিকে বাড়তি সৌন্দর্য দিয়েছে।

তিউনিশিয়া (৬৭০ সাল)

উকবা মসজিদ

উকবা মসজিদ উত্তর আফ্রিকার ইসলামী স্থাপনা বা পুরাকীর্তিগুলোর একটি। এটি তৎকালীন পশ্চিম ইসলামিক দুনিয়ার প্রথম মসজিদ হিসেবে বিবেচিত। পরবর্তীকালে মাগরিবে স্থাপিত অন্যান্য মসজিদের মডেল ছিল এটি। আরবরা মরক্কো, আলজেরিয়া ও তিউনিশিয়াকে বলে মাগরিব, যার অর্থ পশ্চিম বা সূর্যাস্তের দিক। মসজিদটি তিউনিশিয়ার কায়রোয়ান নগরীতে অবস্থিত। এ কারণে এটি কায়রোয়ানের বড় মসজিদ নামেও পরিচিত। মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় ৬৭০ সালে; প্রায় ১৩৫০ বছর আগে আরব সেনানায়ক উকবা ইবনে নাফি কায়রোয়ান নগরীতে এটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে বহুবার মসজিদটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়। বর্তমানে এর টিকে থাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয় নবম শতকে। আঘলাবীয় রাজবংশের আমলে। মসজিদটি প্রায় ৯ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এর অভ্যন্তরে রয়েছে মসজিদের মূল স্থাপনা বা নামাজ আদায়ের স্থান। মসজিদে পাঁচটি গম্বুজ ও নয়টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। এ মসজিদের রয়েছে একটি বিশাল আঙিনা, যা মার্বেল পাথরে পাকা করা। মসজিদের মিনার খুবই আকর্ষণীয় এবং বিশাল। নির্মাণশৈলীতে দুর্গসদৃশ মজবুত পাথরনির্মিত দেয়ালটি ১ দশমিক ৯ মিটার পুরু। এর চার পাশেই রয়েছে বাঁধ বা দেয়াল। আছে বুরুজও, যা প্রতিরক্ষার বিবেচনায় নির্মাণ করা হয়।

আল-আজহার মসজিদ

মিসর (৯৭২ সাল)

মুসলিম ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে মিসরে। যার মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত আল-আজহার মসজিদ। এটি কায়রোর প্রথম মসজিদ। আল-আজহার মসজিদকে বলা হয় মস্ক অব দ্য সপ্লেনড্যানট। ‘আজ-জাহারা’ অর্থ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা হজরত ফাতিমা (রা.)-এর উপাধি ছিল এটি। এই উপাধির সঙ্গে মিল রেখে তাঁকে উদ্দেশ্য করেই মসজিদটির নাম দেওয়া হয়েছে আল-আজহার মসজিদ। ৯৭২ সালে ফাতেমীয় খলিফা আল-মুইজ লিদিনাল্লাহর তত্ত্বাবধানে মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হয়। ৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে এখানে ৩৫ জন আলেমকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে মসজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিশ্বখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। মসজিদটি হয়েছিল কখনো উপেক্ষিত, আবার কখনো নন্দিত। মসজিদটি গড়ে উঠেছিল ইসমাঈলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে। সালাহউদিন আইউবির সাম্রাজ্যের বিভিন্ন সময়ে মসজিদটির মর্যাদা খর্ব করা হয়েছিল। ১২৬৬ খ্রিস্টাব্দে মামলুক সুলতান আবুল আল ফুদুহের শাসনামলে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে অটোমান শাসক আমির আবেদ আল রহমান এই মসজিদের দীর্ঘস্থায়ী সংস্কারের মাধ্যমে একে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলেন।

জেরুজালেম (হজরত সুলাইমান (আ.)-এর আমলে নির্মিত)

আল-আকসা মসজিদ

ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আল-আকসা মসজিদ। যা ‘মসজিদুল আকসা’ নামেও পরিচিত। মসজিদুল আকসা অর্থ দূরের মসজিদ। এটি ইসলামের প্রথম কেবলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মসজিদটি মুসলিমদের অধিকারে থাকলেও ভৌগোলিকভাবে অঞ্চলটি দখল করে রেখেছে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল। ইতিহাসে আছে, পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণের পর হজরত ইয়াকুব (আ.) জেরুজালেমে মসজিদুল আকসা নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে হজরত দাউদ (আ.)-এর নির্দেশে হজরত সোলায়মান (আ.) মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করেন। পূর্বে এর নাম ছিল ‘বাইতুল মাকদাস’। পবিত্র কোরআনে মসজিদটিকে আল-মাসজিদুল আকসা নামকরণ করা হয়েছে। পবিত্রতার দিক থেকে পবিত্র কাবা ও মদিনা শরিফের পর মসজিদুল আকসার স্থান। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, মুহাম্মদ (সা.) মিরাজের রাতে মসজিদুল হারাম থেকে আল-আকসা মসজিদে এসে ঊর্ধ্বাকাশের দিকে যাত্রা করেন। মসজিদুল আকসা কোনো একক মসজিদ নয়। মসজিদে কিবলি, মসজিদে মারওয়ানি, মসজিদুল করিম, মসজিদুল বোরাক এবং কুব্বাত আল সাখরা; এই পাঁচটি মসজিদের সমন্বয়ে মসজিদুল-আকসা গঠিত। মসজিদটির ঠিক মাঝখানে রয়েছে ‘ডোম অব দ্য রক’ বা গম্বুজে সাখরা। সাখার অর্থ পাথর। এটি বিশ্বের বুকে থাকা তিনটি বরকতময় পাথরের একটি।  ২৭ একর ভূমির ওপর নির্মিত মসজিদে একসঙ্গে ৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মুসলিমরা বিশ্বাস করে, নির্মাণের পর থেকে এটি ঈসা (আ.)সহ অনেক নবীর ইবাদতের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মসজিদুল আকসার নিয়ন্ত্রণ একাধিকবার হাত বদলকালে মসজিদটির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। সর্বশেষ উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের যুগে বাইতুল মাকদাস মসজিদটি পুনর্নির্র্মিত  ও সম্প্রসারিত হয়।

মসজিদ আল-কুফা

ইরাক (৬৭০ সাল)

সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদ আল-আজম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও পবিত্র মসজিদগুলোর অন্যতম মসজিদ আল-কুফা। ৬৭০ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের নাজাফ নগরীতে মসজিদটি নির্মিত হয়। এটি ইরাকের নাজাফ প্রদেশের কুফা নগরীতে অবস্থিত হওয়ায় মসজিদ আল-কুফা নামে সর্বাধিক পরিচিত। মসজিদটির গুরুত্ব হিসেবে ইতিহাসবিদরা বলেন, এটি সেই জায়গা যেখানে  হজরত আলী (রা.) মারাত্মকভাবে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন যখন তিনি সেজদারত অবস্থায় ছিলেন। দোউদি বোহরার ৪২তম দা’য়ি আল মুতলাক সৈয়্যদেনা মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন মসজিদটির পুনঃসংস্কারের কাজ হাতে নেন, যা ২০১০ সালের শুরুর দিকেই সংস্কারের কাজ শেষ হয়। বর্তমানে ভবনটির আয়তন প্রায় ১১ হাজার মিটার। নয় কক্ষবিশিষ্ট এই মসজিদে চারটি মিনার এবং পাঁচটি গেট রয়েছে। মসজিদটি সাজানো হয়েছে সোনা, রুপা এবং বহু মূল্যবান পাথর হীরা, রুবি দিয়ে। মসজিদের ভিতরে সোনার অক্ষরে কোরআনের আয়াতের চারুলিপি রয়েছে। পুরো মসজিদে ব্যবহৃত মার্বেল এবং টাইলস সুদূর গ্রিস থেকে আমদানি করা হয়েছিল। এই টাইলসগুলো মক্কার কাবাতুল্লাহতেও ব্যবহার করতে দেখা যায়।

চীন (৬২৭ সাল)

হুয়াইশেং মসজিদ

হুয়াইশেং মসজিদ পৃথিবীর প্রাচীন মসজিদগুলোর একটি। কথিত আছে, জ্ঞানের প্রয়োজনে চীন ভ্রমণের সুবাদেই চীনে ইসলাম বিস্তার সম্ভব হয়। খ্রিস্টীয় ৬২৭ বা তৃতীয় হিজরির কাছাকাছি সময় রসুলে কারিম (সা.)-এর মামা হজরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস বিশিষ্ট তিনজন সাহাবিকে নিয়ে সর্বপ্রথম মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটি ‘লাইটহাউস বা বাতিঘর মসজিদ’ নামেও পরিচিত। এটি চীনের গুয়াংজুর প্রধান মসজিদ। চীনা পরিভাষায় হুয়াইশেং শব্দটির অর্থ হলো ‘জ্ঞানী লোককে স্মরণ’। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে স্মরণ করে মসজিদটির নামকরণ করা হয় ‘হুয়াইশেং মসজিদ’। হিজরি ৮১৫ বছরের প্রাচীন মসজিদটি ‘নূর টাওয়ার’ বা ‘মেমোরিয়াল মসজিদ’ নামে বেশি পরিচিত। হুয়াইশেং মসজিদের মিনার নির্মিত হয়েছিল আজান দেওয়ার প্রয়োজনে। ১১৮ ফুট উঁচ মিনারটি আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদানের জন্যও ব্যবহৃত হতো। যেটিকে মসজিদের আলোক বুরুজও বলা হয়। এতে পাথর ও চুন-সুরকির সুনিপুণ কাজ রয়েছে। আলোক বুরুজের কারণেই মসজিদটির অপর নাম ‘লাইট হাউস বা বাতিঘর মসজিদ। বুরুজের ভিতরে রয়েছে সিঁড়িপথ।  অগ্নিকান্ডসহ নানা বিপর্যয়ে হুয়াইশেং মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১৩৫০ ও ১৬৯৫ সালে এটিকে পুনর্র্নির্মাণ করা হয়। তবে মসজিদের প্রাচীন মিনারটি এখনো অক্ষত আছে।

ভারত (৬২৯ সাল)

চেরামান জামে মসজিদ

ইসলাম প্রচারের জন্য ও ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের কারণে রসুলে কারিম (সা.)-এর জীবদ্দশাতেই এখানে ছুটে আসেন সাহাবায়ে কিরাম। সে সুবাদে ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠিত প্রথম মসজিদ। দেশটির কেরালা রাজ্যের ত্রিসুর অঞ্চলের চেরামান জামে মসজিদ। মসজিদটির সম্মুখভাগে স্থাপিত শিলালিপি অনুযায়ী পঞ্চম হিজরি মোতাবেক ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে সাহাবি মালিক বিন দিনার (রা.) মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয়দের কাছে মসজিদটি ‘চেরামান জুমা মসজিদ’ নামে পরিচিত। মালিক ইবনে দিনার ছিলেন এই মসজিদের প্রথম ইমাম। তাঁর পরবর্তী সময়ে হাবিব ইবন মালিক ইমাম নিযুক্ত হন। একাদশ শতাব্দীতে মসজিদটির সংস্কার ও পুনর্র্নির্মাণ করা হয়। ক্রমান্বয়ে মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ১৯৭৪, ১৯৯৪ ও ২০০১ সালে মসজিদের সামনের অংশ ভেঙে আয়তন সম্প্রসারিত করা হয়। প্রাচীন মসজিদের অভ্যন্তরীণ অংশ, মিহরাব ও মিনার এখনো আগের মতো অক্ষত রয়েছে। মসজিদের বহির্ভাগ কংক্রিট দিয়ে তৈরি হয়। অজু করার জন্য তখনকার নির্মিত পুকুর এখনো আগের মতো আছে। মসজিদের পাশঘেঁষা খালি জায়গায় দুটি কবর বিদ্যমান। মনে করা হয়- একটি হাবিব ইবন মালিকের, অপরটি তাঁর স্ত্রী মুহতারামা হুমায়রার। মসজিদটির ভিতরে পিতলের নির্মিত একটি প্রদীপ রয়েছে।  এটি হাজার বছর ধরে প্রজ্বলিত রয়েছে।

গ্রেট মস্ক অব আলেপ্পো

সিরিয়া (৭১৫ সাল)

বিশ্বের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম সিরিয়ার ‘গ্রেট মস্ক অব আলেপ্পো’। যে মসজিদ সাক্ষী হয়ে আছে প্রাচীন ওমাইয়াদ, সেয়্যুক, আইয়ুব, মামলুক, অটোমান সাম্রাজ্যের। মসজিদটি সিরিয়ার দামেস্ক নগরীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। মসজিদের সম্মুখে লেখা রয়েছে- ওমাইয়াদ শাসনামলে নির্মিত ভবনের নির্মাণ কাল। অষ্টম শতকের গোড়ার দিকে মসজিদটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল, যা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় ৭১৫ খ্রিস্টাব্দে। বর্তমান ভবনটির আগে মসজিদটি বহুবার সংস্করণ করা হয়েছিল। একাদশ শতাব্দী থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত মসজিদে অনেক কিছুর সংযোজন ঘটে। মসজিদের বাড়তি শোভাবর্ধনকারী এই মিনারগুলো নির্মাণ হয়েছিল ১০৯০ সালে। কয়েক শতক ধরে নানা দুর্যোগ-বিগ্রহ, ভূমিকম্প সহ্য করে মসজিদ ভবন টিকে ছিল। তবে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে ২০১৩ সালে মসজিদের ভবন আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তবে বর্তমানে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলার কারণে কবে এর সংস্কার করা হবে, তা সবার অজানা। মসজিদের আশপাশে বাজার এবং বেশ কয়েকটি প্রসিদ্ধ মাদরাসা রয়েছে। এর আশপাশে রোমান মন্দির এবং বাইজান্টাইন গির্জাসহ প্রাক-ইসলামিক আমলের বেশ কিছু ঐতিহাসিক ভবনও রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর