৩ জানুয়ারি, ২০২১ ১৮:১৩
খবর বিবিসি বাংলার

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিয়াল এতোটা হিংস্র হয়ে উঠেছে কেন?

অনলাইন ডেস্ক

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিয়াল এতোটা হিংস্র হয়ে উঠেছে কেন?

আশুগঞ্জে শিয়ালের আক্রমণে আহত ২২ (ডানে)।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় শিয়ালের আক্রমণে ২২জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী একটি শিয়ালকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।

প্রত্যক্ষদর্শী রিপন আহমেদ জানান, শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে দুটি শিয়াল লোকালয়ে ঢুকে পড়ে এবং ঘরের ভেতরে ঢুকে একটি শিশুকে কামড়ে দেয়।

পরে শিয়াল দুটি হিংস্র হয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে নারী ও শিশুসহ ২২জনকে মানুষকে কামড়ে আহত করে। এর মধ্যে ছয় দিন বয়সী একটি শিশুও রয়েছে।

সবাই আতঙ্কে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে লোকজন জড়ো হয়ে একটি শিয়ালকে জাপটে ধরে। ধস্তাধস্তি চলাকালে শিয়ালটি বাকিদের কামড়ে দেয়। পরে সবাই মিলে ওই শিয়ালটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। আহতদের সবাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে আহতদের সবাইকে জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেয়া হয়।

বাংলাদেশে শিয়ালের হামলার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিয়ালের কামড়ে অন্তত ২৭ জন পথচারী আহত হওয়ার ঘটনা। পরে আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তার আগে নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় শিয়ালের কামড়ে অন্তত ১০০ জন আহত হওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে।

শিয়ালের এই উৎপাতে আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

তবে শেয়াল কোন হিংস্র প্রাণী নয়, বরং নিশাচর বন্য এই প্রাণীটি লোকালয় থেকে দূরেই থাকে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম।

শুধুমাত্র খাবারের অভাব দেখা দিলেই সন্ধ্যা বা রাতের বেলা লোকালয়ে এদের বিচরণ করতে দেখা যায়। বনে খাবার না পেলে লোকালয়ে হানা দিয়ে হাঁস-মুরগি ধরে নেয়।

আত্মরক্ষা ছাড়া শিয়াল কোন মানুষের ওপর হামলা চালায় না, অবশ্য জলাতঙ্ক রোগ হলে এদের আচরণ কিছুটা বেপরোয়া হয়ে যায় বলে জানান মি. ইসলাম।

আর এই সময়েই মানুষের হাতে এই প্রাণীটির মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ শেয়ালই পাতিশিয়াল ও ছোট আকারের খেঁকশিয়াল প্রজাতির, যা দেখতে অনেকটা দেশি কুকুরের মতো, গায়ের লোম বাদামি এবং লেজ কালো।

ক্যানিডি পরিবারের স্তন্যপায়ী প্রাণীটিকে বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।

কিন্তু নির্বিচারে গাছপালা ঝোপঝাড় কাটার পাশাপাশি গর্ত ভরাট করে ফেলায় অন্য সব প্রাণীর মতো শিয়ালের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মি. ইসলাম।

তিনি বলেন, "শিয়ালের বাঁচার উপযুক্ত পরিবেশ যদি থাকতো, তাহলে সে লোকালয়ে আসতো না। কারণ মানুষ তার খাবার নয়। শিয়াল বরং ইঁদুর, পোকামাকড়, মৃত প্রাণী, পচা-গলা এক কথায় সব ধরণের খাবার খেয়ে পরিবেশকে ভালো রাখে। আর এই প্রাণীটি রোগ ছড়ায় না। তাই এই পরিবেশে ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র রক্ষায় শিয়াল অনেক প্রয়োজন।"

এছাড়া, ইঁদুর-পোকামাকড় কমে যাওয়ায় শিয়ালের লোকালয়ে হানা দেয়ার অন্যতম কারণ বলে তিনি জানান।

"এখন আমাদের পরিবেশে ইঁদুর, পোকামাকড় কমে গেছে। খাবারের অভাবেই তারা লোকালয়ে আসে। মানুষ এদের দেখে ভয় পায়, তাড়া করে। মানুষের ভয় দেখে তারাও আতঙ্কিত হয়ে যায় যা এই হিংস্রতাকে উস্কে দিতে পারে। কিন্তু শিয়াল হিংস্র নয়।"

এক্ষেত্রে এই প্রাণীগুলোর উপযুক্ত পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি গ্রামবাসীকে সচেতন করে তোলার ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি। 

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর