২৫ মে, ২০২৩ ০৮:৫০

নীলফামারীর মাটিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে ব্যাপক সফলতা

অনলাইন ডেস্ক

নীলফামারীর মাটিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে ব্যাপক সফলতা

ফাইল ছবি

নীলফামারী জেলায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সফল হয়েছেন সদর উপজেলার কৃষক সামসুল হক (৩৫)। জমিতে চারা রোপণের ৭৫ দিনে অসংখ্য ছোট-বড় তরমুজে ভরেছে তার ক্ষেত। জেলায় পরীক্ষামূলক চাষে এমন সফলতা সাড়া ফেলেছে এলাকায়। তেমনি  ব্যাপক লাভের আশা করছেন ওই কৃষক।

নীলফামারী সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের উত্তর কানিয়াখাতা গ্রামের কৃষক সামসুল হক। নিজের কৃষিজমি ২৬ শতর হলেও বাৎসরিক চুক্তি নিয়ে চার বিঘা জমিতে শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ফলান তিনি। এবার ১৫ জমিতে চাষ করেছেন গ্রীষ্মকালীন তরমুজ। কৃষক সামসুল হক জানান, ১৫ শতকে জমিতে লাগানো হয়েছে ১৫০টি গাছ। প্রতিটিতে গাছে পর্যাপ্ত পরিমান ফল এসেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ফল বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হবে।

কাঙ্খিত ফল পাওয়ার কথায় তিনি জানান, প্রতিটি গাছ থেকে অন্তত ছয়টি করে ফল বিক্রি করা সম্ভব হবে। যার প্রতিটির ওজন কমপক্ষে তিন কেজি। সে হিসেবে এক হাজার ৮০০ কেজির অধিক তরমুজ পাওয়া সম্ভব। এতে করে বর্তমান বাজার দরে এক লাখ আট হাজার টাকা আসবে তার ঘরে। ১৫ শতক জমিতে তরমুজ চাষে তার খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। এতে করে তার লাভ হবে ৯২ হাজার টাকার অধিক। মাত্র ৮০ থেকে ৮৫ দিনে অন্য কোন  ফসল থেকে ওই পরিমান আয় করা সম্ভব নয়।

সরেজমিনে ওই ওই কৃষকের জমিতে গিয়ে দেখা গেছে বাঁশের তৈরি মাচায় অসংখ্য ছোট বড় তরমুজ ঝুলতে।  ওই জমিতে রোপণ করা হয়েছিল তৃপ্তি ও ব্লাক বেবি জাতের তরমুজ। এসব জাতের তরমুজের বীজ সরবরাহ করেছে সদর উপজেলা কৃষি বিভাগ। এলাকায় গ্রীষ্মকালে এ কৃষিটি নতুন হওয়ায় তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ লাভজনক। সাধারণত তরমুজের গাছ লাগাতে হয় শীত মৌসুমে। কিন্তু নীলফামারী জেলা শীত প্রবণ হওয়ায় এখানে অতি শীতে তরমুজের গাছ মরে যায়। একারণে অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় এখানে তরমুজ চাষ হয় না। এ অঞ্চলের মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করা সম্ভব। তাই এবার পরীক্ষামূলকভাবে সদর উপজেলার তিনটি ব্লকে তিনজন কৃষকে দিয়ে ৩৪ শতাংশ জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করা হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আগামীতে এর সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।

সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এস এম রাকিব আবেদীন জানান, এবার গ্রীষ্মকালীন দুইটি জাতের তরমুজের পরীক্ষামূলক আবাদ করা হয়েছে। এ জাত দুটির মধ্যে একটি তৃপ্তি, অপরটি ব্লাক বেবি। এ দুটো জাতের ভেতরের অংশ স্বাভাবিক সময়ের তরমুজের চেয়ে অধিক লাল। মিষ্টতার দিক থেকেও অতুলনীয়। এক সপ্তাহের মধ্যে তরমুজ বাজারজাত করা যাবে। 

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাজারে ওই তরমুজ সর্বনিম্ন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে এক বিঘা জমির তরমুজ বিক্রি করা যাবে দুই লাখ টাকার ওপরে। কৃষকদের তরমুজ বাগান দেখে আশপাশের কৃষকরাও তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আশা করছি আগামীতে এ অঞ্চলে ব্যাপকহারে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষ বাড়বে। এবার আমার ব্লকসহ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহফুজার রহমান এবং  মো. গোলাম জাকারিয়ার ব্লকে ৩৪ শতকের আবাদ হয়েছে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক আহমেদ বলেন, গ্রীষ্মকালীন তরমুজ উচ্চ মুল্যের ফসল। এ অঞ্চলে বেলে দো-আশ মাটিতে এ জাতের তরমুজ চাষের উপযোগী। আমরা প্রথমবারের মত এর চাষ করে সফল হয়েছি। এমন সফলতায় এলাকায় এ কৃষির সম্ভানার দ্বার উন্মোচন হলো। এ সময়ে ব্যাপক তরমুজ চাষে হলে এলাকার কৃষকের ভাগ্য খুলে যাবে।

তিনি আরও বলেন, তরমুজের মূল সমস্যা শীত। এ অঞ্চলে শীত বেশি হওয়ার কারণে স্বাভাবিক সময়ের তরমুজ এ অঞ্চলে হয় না। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে লাভ বেশি। গাছ রোপণের ৮০ দিনের মধ্যে ফলন বাজারজাত করা যায়। এটি যেমন রসালো, তেমনি সুমিষ্ট।

 
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর