বাড়ির সামনে ১৫ শতক পরিত্যক্ত জায়গায় প্রথমবারের মতো হাজারী জাতের উচ্চ ফলনশীল লাউ চাষ করে সফল হয়েছেন ময়দান আলী নামে এক প্রান্তিক কৃষক। তার বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের আয়েশ গ্রামে।
১৫ শতক জমিতে লাউ চাষে তার খরচ হয়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা। ১৫ দিনে বিক্রি করেছেন প্রায় ২০ হাজার টাকা। আরও ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বিক্রি করার আশা করছেন তিনি। খরচ বাদে তার সম্ভাব্য লাভের পরিমাণ প্রতি শতাংশে প্রায় ২ হাজার টাকা। কম খরচ ও অল্প সময়ে এমন লাভের হিসাব দেখে লাউ চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের।
একজন সফল ধান ও কচু চাষি হিসেবেও কৃষক ময়দানের এলাকায় বেশ সুনাম রয়েছে। এবার মাত্র দুই মাসের মধ্যে লাউ চাষে অভাবনীয় লাভ পেয়ে খুশি হয়েছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, হাজারী লাউ একটি উচ্চ ফলনশীন লাউ জাত। এ জাতের লাউ রোপণের ৫ থেকে ৭ দিনে চারা হয় এবং ৪২ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফুল ও ফল ধরে। এ ছাড়া ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যেই বাজারজাত করা যায়। এ লাউ দেখতে সুন্দর ও তরতাজা, খেতেও সুস্বাদু। এ ছাড়া বাজারে চাহিদা ও ফলন বেশি হওয়ায় এ লাউ চাষে কৃষকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, কৃষক ময়দানের বাড়ি সংলগ্ন সবজি বাগানের মাচায় ঝুলছে লম্বা সবুজ রঙের হাজারী জাতের অসংখ্য লাউ। যেদিকে তাকানো যায় শুধু লাউ আর লাউ। বাগানের এসব ঝুলন্ত সবুজ কচি লাউ দেখলে যে কোনো মানুষের চোখ জুড়িয়ে যায়। কৃষক ময়দান এ সবজি বাগানে জৈব সারের সাথে সামান্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছেন। অন্যদিকে কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। এজন্য বিষমুক্ত নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব ময়দানের সবজি বাগানের লাউ খেতে যেমন সুস্বাদু, বাজারেও এ সবজির চাহিদা বেশি।
কৃষক ময়দান আলী জানান, বাড়ির সামনে আনুমানিক ১৫ শতাংশ জায়গা সারাবছর পরিত্যক্ত থাকে। এ বছর স্থানীয় কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে জীবনে প্রথমবার লাউ চাষ শুরু করি। হাজারী লাউ বীজ সংগ্রহ করে গত শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহে রোপণ করেছিলাম। দুই মাস পরিচর্যা করার পর আমার সবজি বাগানে অসংখ্য লাউ আসে। আজ থেকে ১৫-২০ দিন আগে থেকেই লাউ বাজারজাত করা শুরু করেছি। এ পর্যন্ত আমি ২০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি। ওজন ভেদে প্রতিটি লাউ খুচরা ৫০-৬০ টাকা এবং পাইকারি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। আরও ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করার আশা করছি। মাচা তৈরিসহ আমার মোট খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ জানান, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বর্ষাকালীন সবজি বা খরিপ-২ মৌসুমে সিংড়া উপজেলায় ৩১৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির চাষ হয়েছে। এর মধ্যে লাউ চাষ হয়েছে ১২ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত ৯ হেক্টর জমির লাউ কর্তন করা হয়েছে, যা প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ২৫ টন। এখন সারা বছরই সবজির চাষ হয়। কৃষকরা জৈব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত লাউ চাষ করছেন। বাজারে লাউয়ের চাহিদা থাকায় ও ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পেরে লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই