নাম তার শাহিন। শুনে মনে হবে হয়তো কোনো মানুষের নাম। আসলে তা নয়। শাহিন একটি পাখির নাম। পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রততম পাখির তালিকায় রয়েছে শাহিনের নাম। শাহীন প্রতি ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারে। আমাদের দেশে এটি বিরল প্রজাতির। শীতকালে পরিযায়ী হিসেবে বেড়াতে আসে আমাদের দেশে। আবার কিছুদিন পর চলে যায়। সম্প্রতি এ পাখির দেখা মিলেছে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদে।
সম্প্রতি কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে এই পাখিকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শৌখিন আলোকচিত্রী ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বলেন, শাহিন পৃথিবীর দ্রুততম একটি পাখি। এটি বাংলাদেশে দুর্লভ। শীতকালে এ দেশে আসে।
ব্রহ্মপুত্র নদে কয়েকদিন চেষ্টার পর এই পাখিটির দেখা মিলেছে। পাখিটি সম্পর্কে জানা গেছে, শিকারি পাখি হিসেবে শাহিন পৃথিবীর দ্রুততম প্রাণী হিসেবে খ্যাত। এর দৈর্ঘ্য ৪২ সেন্টিমিটার, ডানা ২৮ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার, পা ৪ দশমিক ৯ সেন্টিমিটার, লেজ ১৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ছেলের চেয়ে মেয়ে পাখি আকারে কিছুটা বড় হলেও এদের দেহের রঙে কোনো পার্থক্য নেই। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের দিক কালচে ধূসর, দেহের নিচের দিক লালচে, মাথার আবরণ কালো, গুম্ফ-ডোরা স্পষ্ট, পেট ও রানে কালো ডোরা, নীল ঠোঁটের আগা কালচে, মাঝে মাঝে গোঁড়া হলদে হয়, চক্ষুগহ্বর ও মুখের সঙ্গমস্থল উজ্জ্বল হলুদ, চোখ গাঢ় বাদামি, এবং পা ও পায়ের পাতা হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ তুলনামূলকভাবে কালচে বাদামি-কালো ও ফিকে।
দেহতলে স্পষ্ট লম্বালম্বি দাগ থাকে। তরুণ পাখির পিঠ বেশি বাদামি-কালো ও দেহতল মরচে রঙের। শাহীন সাধারণত নদী, হ্রদ, খাড়া পাহাড়, জলাভূমি, প্যারাবন, অর্ধ-মরুভূমি ও পাথুরে প্রান্তরে বিচরণ করতে পছন্দ করে। ডালে অথবা মাটিতে বসে কিংবা বৃত্তাকারে আকাশে উড়ে এরা শিকার খোঁজে। খাদ্যতালিকার মধ্যে আছে ভূচর পাখি, সৈকত পাখি, জলচর পাখি, পোষা পাখি, বাদুড় ইত্যাদি। ভোরে এবং সন্ধার আগে আগে এদের মধ্যে চাঞ্চল্য বেশি থাকে। এ সময় খুব দ্রুত বেগে শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। যার গতি ৩০০ কিলোমিটারের বেশি। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। এরা জোড়া বেঁধে আকাশে উড়ে বিমানের মতো মহড়া দিয়ে থাকে। পাহারের গায়ে, গাছে ডালপালা, ঘাস ও পশম দিয়ে মাচার মতো বাসা বানিয়ে এরা তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে। ২৫ থেকে ২৭ দিনে ডিম ফোটে। মেয়ে পাখি একা ডিমে তা দেয়। শাহীন বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি, শীতে কদাচিত এদের দেখা পাওয়া যায়। পাকিস্তানে তৈরি একটি ব্যালাস্টিক মিসাইলের নাম রাখা হয়েছে শাহীন পাখির নামে। দেশটির এয়ারফোর্সের অফিশিয়াল লোগোতে রয়েছে এই পাখি। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ব্যাচ, লোগো এবং তাদের পরিচালিত বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে এই পাখির নামে। আরব শেখেরা এই পাখি পোষেন শিকার করার জন্য।
বিডি প্রতিদিন/এমআই