বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে আমি ঢাকার রামপুরা ব্রিজের সামনে ১৮ জুলাই পুলিশের গুলি পায়ে লেগে আহত হই। পুলিশের ভয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারি নাই। একটু সুস্থ হয়ে ৫ আগস্ট আবার আন্দোলনে যাই। ওইদিন আন্দোলনে গিয়ে বাড্ডা ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে পুলিশের ছোড়া কয়েক শত গুলি (স্প্লিন্টার) আমার ডান হাতে, পাঁজরে এবং মুখমণ্ডলে লাগে। স্প্লিন্টারের আঘাতে আমার ডান হাত ঝাঝরা হয়ে যায়। আমি পঙ্গু হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরে সাভার সিআরপিতে থেরাপি দিয়ে বাড়ি চলে আসি। চিকিৎসকরা বলেছেন, আমার শরীরে যে গুলি রয়েছে তা বাংলাদেশে অপারেশন করে বের করা সম্ভব হবে না। আমার হাতে ও শরীরে প্রায় ৪শ’ গুলি রয়েছে। রাতে ঘুমাতে পারি না যন্ত্রণায়।
এভাবেই আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করছিলেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ মো. হাসান সরদার (২১)। তিনি বরিশাল আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের পতিহার গ্রামের মৃত মানিক সরদারের ছেলে।
মো. হাসান সরদার বলেন, আমার পিতা নাই। আমরা দুই ভাই, এক বোন ও মাকে নিয়ে আমাদের পরিবার। আমি ভাই-বোনের বড়। আমার ছোট ভাই-বোন কলেজে পড়ালেখা করে। পিতার মৃত্যুর পরে আমার আয়ে চলে পরিবার ও ভাই-বোনদের লেখাপড়া। আমি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হলে আমার পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। আমি কিছুটা সুস্থ হয়ে গ্রামের বাড়ি চলে আসি। চিকিৎসা করতে অনেক টাকা দেনা হয়েছি। প্রতিদিন সকাল হলে পাওনাদার বাড়ি আসে টাকা জন্য। সামনে রমজান ঘরে নেই খাবার। পারি না ভাই-বোনদের কলেজের বেতন দিতে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহত হাসান সরদারের ঘরে খাবার নেই এই তথ্য জানতে পারে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের সামাজিক সংগঠন বসুন্ধরা শুভসংঘ আগৈলঝাড়া উপজেলা শাখা। শনিবার বসুন্ধরা শুভসংঘের আগৈলঝাড়ার সদস্যরা খাদ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হয় হাসান সরদারের বাড়ি। ২৫ কেজি চাল, ৫ কেজি আটা, ২ কেজি ডাল, ২ লিটার তেল, ২ কেজি আলু ও নগদ ৪ হাজার টাকা হাসান সরদার ও তার মা নূরজাহান বেগমের হাতে তুলে দেয় বসুন্ধরা শুভসংঘ।
আগৈলঝাড়া উপজেলা শাখার উপদেষ্টা এসএম ওমর আলী সানি ও আগৈলঝাড়া প্রেসক্লাব সভাপতি মো. মাহবুবুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক ভিপি মো. আনোয়ার জাহিদ আলো, সমাজসেবক মো. ফরহাদ হোসেন, বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্য রোবট আবিষ্কারক মো. ইরান সরদার, ছাত্রনেতা মো. সাইফুর রহমান টিটু, কাওছার খলিফা, আজাদ এলাহী, তুহিন শিকদার, মেহেদি হাসান তানজিল, আরিফ হাসান মৃধা প্রমুখ।
খাদ্যসামগ্রী ও টাকা পেয়ে হাসান ও তার পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি দেখা যায়। রমজান মাসে তাদের আর খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহত মো. হাসান সরদারের মা নূরজাহান বেগম অশ্রুসজল চোখে বলেন, আমাদের ঘরে খাবার নেই। ছেলে-মেয়ের কলেজের লেখাপড়ার খরচ নাই। তাদের লেখাপড়া বন্ধের পথে। হাসানের শরীরে অনেক গুলি রয়েছে, যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারে না। ডাক্তার বলেছে তাকে ভালো খাবার খাওয়াতে কিন্তু তাকে একটি ডিমও খাওয়াতে পারি না। আজ আমার বাড়ি বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা এসে চাল, ডাল, আটা, তেলসহ খাবার ও নগদ টাকা দিয়েছে। আমি এই টাকা দিয়ে ভালো কিছু খাওয়াতে পারবো আমার ছেলেকে। রমজান মাসে ওই খাবার খেয়ে রোজা রাখতে পারবো। আমরা না খেয়ে থাকছি, কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমাদের খোঁজ নিয়েছে। আমরা বসুন্ধরা শুভসংঘের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। বসুন্ধরা শুভসংঘ সব সময় অসহায় মানুষের পাশে থেকে যেন তাদের সাহায্য করতে পারে।
বসুন্ধরা শুভসংঘ আগৈলঝাড়া শাখার উপদেষ্টা এসএম ওমর আলী সানি বলেন, যাদের জন্য আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, বসুন্ধরা শুভসংঘ তাদের পাশে থাকবো সবসময়।
স্থানীয় মো. সাইফুর রহমান টিটু জানান, দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে সবার বড় হাসান। পিতার মৃত্যুর পর থেকে হাসানের আয়ে চলতো কলেজ পড়ুয়া দুই ভাই-বোনের পড়াশোনাসহ পরিবার। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ঢাকা যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হাসান সরদার। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরে তার অবস্থা একটু উন্নতি হয়েছে। ডাক্তার বলছে এখন তার চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব না। এমন সংকটময় মুহূর্তে আপনাদের এই উপকার সত্যিই প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল