টেন্ডার ছাড়াই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আম ও লিচু বাগানগুলো দখল নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ টি বাগানের মধ্যে ৩টি বাগান এখন ছাত্রলীগের অবৈধ দখলে। আর এই বাগানগুলো দখলে নিয়েছেন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সারোয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফ করিম রুপম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সাবরুন জামিল সুষ্ময়।
শুধু অবৈধ দখলেই থেমে নেই তারা। আম ও লিচু গাছের দিকে কোনো শিক্ষার্থী তাকালেই তাকে মারধর, গালিগালাজ ও নানাভাবে লাঞ্ছিত করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, গত ২৮ এপ্রিল রাবির দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীকে গাছ থেকে লিচু পাড়ার অভিযোগে মারধরের ঘটনা ঘটে। ওই দিনেই লিচু গাছের জালে আটকে পড়েছিলো বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় পাখি বসন্ত বাউরি। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের তৎপরতায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এখনো প্রতিটি লিচু গাছে বুলবুলি, চড়াইসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি জালে আটকে প্রাণ হারিয়েছে। প্রায় লিচু গাছে প্রাণহারা পাখিগুলোকে জালের সাথে আটকে থাকতে দেখা গেছে।
এরপর গত ৩০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় রাকসু ভবনের সামনের এক গাছ থেকে ৩টি লিচু ছেড়ে এক শিক্ষার্থী। একারণে ওই শিক্ষার্থীকে গালিগালাজ করে ৩টি লিচুর মূল্যস্বরুপ ২৪ টাকা নেয় ছাত্রলীগের নেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জুয়েল মামুন নামের এক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু, ইবলিস চত্বর, শহীদুল্লাহ ও মমতাজ ভবনের সামনের বাগনগুলোতে লিচু বা আম পাড়তে দেখলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দিচ্ছে। ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কিন্তু গাছগুলো সত্যিকার অর্থে লিজ দেয়া হয়েছে কিনা তা আমরা জানি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি লিজের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্ট করতো- শিক্ষার্থীরা আম, লিচু খেতে পারবে কিনা আর কারা এই বাগানগুলো লিজ নিয়েছে তা আমাদেরকে জানাতো, তাহলে কারো কাছে এভাবে আমাদের অপমান হতে হতো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের গাছ যেহেতু টেন্ডার হয়নি সেহেতু কেউই লিচু পাড়তে বাধা দেওয়ার অধিকার রাখে না। যদি কোন ছাত্রনেতা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বাধা দেয়, সেটি অবশ্যই অনৈতিক কাজ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রাবির আম-লিচু গাছ মিলে মোট ৭টি বাগান রয়েছে। এ বাগানগুলোর মধ্যে ৪টি ট্রেন্ডার হলেও এখনো ৩টি বাগান ট্রেন্ডার হয়নি। ফাহিম আর রুহুল আমিন নামের দুই ঠিকাদার বিনোদপুর গেট, প্রশাসন ভবনের পেছনের, পশ্চিম পাড়ার এবং গোরস্থানের পাশের আম-লিচুর এই চারটি বাগানের ট্রেন্ডার পেয়েছেন। মমতাজ উদ্দিন এবং শহীদুল্লাহ কলা ভরনের সামনে দুইটি আর রাকসু ভবনের সামনের একটি বাগানের টেন্ডার ওপেন হলেও তা এখনো ডাক হয়নি।
এদিকে, রাজশাহী দূর্গাপুর এলাকার সুলতান ও তালাইমারি এলাকার আশরাফ দুই ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগানগুলো পাহারা দিতে দেখা গেছে।
সুলতান জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার আমাকে এই বাগান দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রায় ৪-৫ দিন থেকে আমি এই বাগানগুলো পাহারা দিচ্ছি।’
ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার এক বড় ভাই এই বাগানগুলো টেন্ডার নিয়েছেন। তিনি আমাকে বাগানগুলো দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছে।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবরুন জামিল সুষ্ময় জানান, ‘সারোয়ার ও রাসেল নামের ক্যাম্পাসের দুই বড় ভাই এই বাগান টেন্ডার নিয়েছেন। বড় ভাইয়ের সূত্রে এই বাগান আমি দেখাশুনা করছি।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর বলেন, ‘আমার জানা মতে- সারোয়ার বা সুম্ময়ের কোন এক বড় ভাই টেন্ডার নিছে। কিন্তু ক্যাম্পাসের কোন ছাত্রলীগ নেতা আম-লিচু বাগান টেন্ডার নেইনি।’
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, আম-লিচু বাগান টেন্ডারের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার