২৪ জানুয়ারি, ২০২২ ১৩:০৬

শাবিপ্রবিতে রঙতুলির আঁচড়ে উপাচার্যবিরোধী স্লোগান

সিলেট ব্যুরো:

শাবিপ্রবিতে রঙতুলির আঁচড়ে উপাচার্যবিরোধী স্লোগান

বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে উপাচার্যবিরোধী স্লোগান লিখেছেন আন্দোলনকারীরা। রঙতুলির আঁচড়ে স্লোগানগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রবিবার রাতের কোনো এক সময়ে। ছবি: জুবায়ের মাহমুদ।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হলের প্রভোস্টের ‘অসদাচারণের’ প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের চূড়ান্ত দাবিতে রুপ নিয়েছে। এ দাবিতে আমরণ অনশন করছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি বিভিন্ন পন্থায় তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে উপাচার্যবিরোধী স্লোগান লিখেছেন আন্দোলনকারীরা। রঙতুলির আঁচড়ে স্লোগানগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রবিবার রাতের কোনো এক সময়ে।

শাবির গোলচত্বর শিক্ষার্থীদের অন্যতম আড্ডাস্থল। প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা এখানে জমিয়ে আড্ডা দেন। বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ে এখানে এসে জড়ো হন। এই গোলচত্বরে অর্ধেক অংশজুড়ে বিভিন্ন স্লোগান লিখা হয়েছে।

স্লোগানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘যেই ভিসি মিথ্যা বলে, সেই ভিসি চাই না’ ‘যেই ভিসি বোমা মারে, সেই ভিসি চাই না’ ‘পতন পতন পতন চাই, স্বৈরাচারের পতন চাই’ ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, শাবিপ্রবি মুক্তি পাক’ প্রভৃতি। এসব স্লোগানের সাথে হ্যাশট্যাগ হিসেবে ‘#savesust’ লিখা হয়েছে।
 
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন জানান, উপাচার্যের পদত্যাগের যে দাবি, তা আরও বেগবান করতে এসব স্লোগান লেখা হয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এসব স্লোগান রঙতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন।

জানা গেছে, শাবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের অসদাচরণের প্রতিবাদে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে ওই হলের ছাত্রীদের মাধ্যমে সূচিত হয় আন্দোলন। গত ১৫ জানুয়ারি আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে নতুন মাত্রা পায় আন্দোলন। হলের প্রভোস্টের অপসারণ, অব্যবস্থপনা দূর, ছাত্রলীগের হামলার বিচার চেয়ে পরদিন সকল শিক্ষার্থী আন্দোলনে সামিল হন। সেদিন উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাকে মুক্ত করতে গেলে পুলিশকে বাধা দেন শিক্ষার্থীরা। এতে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন।

এদিকে, গত ১৬ জানুয়ারির পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনায় দুই থেকে তিনশ’ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পরদিন (১৭ জানুয়ারি) রাতে মামলা করে পুলিশ। মামলার এজাহারে পুলিশ লিখেছে, সেদিন শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর গুলিও ছুঁড়েছিল। এ মামলা প্রত্যাহারে মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাত ১০টা পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে মামলা প্রত্যাহার হয়নি।
 
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দিনভর উত্তপ্ত ছিল শাবি ক্যাম্পাস। সকাল থেকে ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণ, প্রক্টর ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগানে দিনভর মুখর ছিল ক্যাম্পাস। এ সময় কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে যান আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলের সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক আহমদ, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহা ও সিসিক কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান।

ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। শিক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্যাম্পাসে যান। তাঁরা উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে দাবি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না পেয়ে আন্দোলন থেকে সরার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে গণসাক্ষর সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বরাবরে চিঠি পাঠান।

এদিকে, মঙ্গলবার রাত ১০টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা অবধি সময় বেঁধে দেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি পদত্যাগ না করায় পূর্বঘোষণা অনুসারে আমরণ অনশন শুরু করেন ২৪ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একজনের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি বাড়ি চলে যান। বাকি ২৩ জনের সাথে গতকাল আরও ৫ শিক্ষার্থী যোগ দেন।
 
গত শুক্রবার দুই দফায় শাবি ক্যাম্পাসে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাদেল। তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে। শিক্ষামন্ত্রী অনশন ভাঙতে ও আলোচনায় বসতে আহবান জানান শিক্ষার্থীদের। আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানান। প্রথমে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেও পরে শিক্ষার্থীরা মত বদলে ফেলেন।

গত শুক্রবার রাতে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় যায়। গত শনিবার তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বাসায় বৈঠকে বসেন। বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী ফের আলোচনায় বসতে শিক্ষার্থীদের আহবান জানান।

শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে শাবির আন্দোলনরতদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি আন্দোলন থেকে সরে এসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে জোর দেন। কিন্তু কোনো ফলাফল আসেনি।
 
সর্বশেষ গতকাল রবিবার (২৪ জানুয়ারি) রাত পৌনে ৮টার দিকে শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এর আগে বিকাল থেকে তাঁর বাসা ঘেরাও করেন তারা। অনশনরত ২৮ শিক্ষার্থীর ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর