আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক(সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিটে পরীক্ষার মাধ্যমে শুরু হবে দেশের উচ্চ শিক্ষার শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া। এ পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছে ৩০ হাজার ৬৯৩ জন ভর্তিচ্ছু। গতবারের ন্যায় এবারও ভর্তিপরীক্ষাগুলো বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত (দেড় ঘণ্টা) একযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, ভর্তি পরীক্ষায় আগত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহায়তার জন্য নানান উদ্যোগ নিয়েছে ছাত্রলীগ। সাম্প্রতিক সংঘর্ষের জেরে ক্যাম্পাস ছাড়া হওয়ার পর একই ধরনের কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে আসার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদলও।
ভর্তিপরীক্ষা উপলক্ষ্যে ছাত্রলীগের কর্মসূচি নিয়ে বৃহস্পতিবার মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ। এতে কর্মসূচি তুলে ধরেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। ছাত্রলীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থায়ী ‘শিক্ষার্থী সহায়তা ও তথ্যকেন্দ্র’ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ; শিক্ষার্থীদের পরিবহনের সুবিধার্থে বিনামূল্যে ‘জয় বাংলা বাইক সার্ভিস’ পরিচালনা; ‘অভিভাবক ছাউনি’র মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সাথে আগত অভিভাবকদের বিশ্রামের সুব্যবস্থা করা; সুপেয় পানির ব্যবস্থা; পরীক্ষা কেন্দ্র পরিচিতির জন্য ক্যাম্পাসে দিক নির্দেশক চিহ্ন ও সার্বক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ; শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত অথচ পরীক্ষা কেন্দ্রে নেয়ার অনুপযোগী জিনিসপত্র রাখার ব্যবস্থা করা; শিক্ষার্থী ও তাদের সাথে আগত অভিভাবকের ব্যবহারের জন্য মোবাইল টয়লেটের' ব্যবস্থা করা; প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য হুইলচেয়ার ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সরবরাহ করা; তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ‘প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র’ গঠন করা; মাস্ক, কলম ও আনুষঙ্গিক শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে হল ছাত্রলীগ পরীক্ষার পূর্ব রাতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের থাকার সুব্যবস্থা করা প্রভৃতি।
শিষ্টারবহির্ভূত আচরণ করলে ছাত্রদলকে ‘চণ্ডী রুপ’ দেখাবে ছাত্রলীগ
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান সনজিত। তিনি বলেন, অন্যরা যারা কর্মসূচি দেবে, তারা আমাদের সহযোগিতা করতে পারে, তারা নিজেরাও করতে পারে। কিন্তু এমন কোন কর্মসূচি দেওয়া যাবে না, যাতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি’র প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আবারও ক্যাম্পাসে আসতে পারে ছাত্রদল। তারা এলে ছাত্রলীগের অবস্থান কেমন হবে- এ প্রসঙ্গে সনজিত বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস, এখানে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরীক্ষা যে সুন্দর পরিবেশ আছে, তা যদি বিঘ্নিত না হয়, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ অবশ্যই তা প্রতিহত করবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাহায্য নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, জাতির জনককে নিয়ে তারা যে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়েছে, ‘পচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, আমাদের নেত্রীকে প্রকাশ্যে হত্যার যে হুমকি দেওয়া, এ ধরনের সংগঠনকে সারা বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ বর্জন করেছে। এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘চণ্ডী রুপ’ অবশ্যই তাদের দর্শন করতে হবে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার যে ঐতিহ্য রয়েছে, সেটা রক্ষা করতে ক্রিয়াশীল সকল ছাত্রসংগঠন যেন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে সেই আহ্বান জানাই। একাডেমিক পরিবেশ রক্ষায় গতানুগতিক রাজনৈতিক কর্মসূচি যেমন, মিছিল-মিটিং এগুলো যেন আমরা ক্যাম্পাসে পরিহার করি। এতে পরীক্ষার্থীর নিবিড় অনুশীলনে ব্যাঘাত হতে পারে। যেহেতু তারা নতুন পরিবেশে আসে, সেই পরিবেশে তারা কিন্তু অভ্যস্ত থাকে না।
অন্যদিকে, ছাত্রদল ভর্তিচ্ছু ভর্তিপরীক্ষাদের ফুল ও কলম দিয়ে বরণ, তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে তথ্য দিয়ে সহায়তা এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা প্রভৃতি কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আকতার হোসেন।
ছাত্রলীগের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কিন্তু ছাত্রলীগ নয়। প্রশাসন যদি মনে করে আমাদের কর্মকাণ্ড নেতিবাচক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিরোধী, তারা আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। ছাত্রলীগকে তো এ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বরং ছাত্রলীগই প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে, অথচ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন