মারধর ও নির্যাতনের শিকার হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী ভয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ছাত্রের অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৭ আগস্ট তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতনের পর দুই ছাত্রলীগ নেতা তার ডেবিট কার্ড থেকে ৪৫ হাজার টাকা তুলে নেন।
এ ধরনের অভিযোগ-সংবলিত একটি চিঠি কুরিয়ারের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দপ্তরে পৌঁছেছে। এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. আল-আমিন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলায়। ভুক্তভোগী ছাত্রের চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে। গত ১৭ আগস্ট ছিল প্রথম পরীক্ষা।
ঘটনার বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, কুরিয়ারের মাধ্যমে একটি অভিযোগ এসেছে। তারা এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করে দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে আল-আমিন বলেছেন, তিনি ১৭ আগস্ট পরীক্ষায় অংশ নেন। ওইদিন বিকাল সাড়ে চারটায় পরীক্ষা শেষে বের হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা রবীন্দ্রভবন থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু হলের ৩৩১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সেখানে মুমিনুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ ওরফে শশী, তাকি আহমেদসহ অনেকে আসেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মুমিনুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ শশী ও তাকি আহমেদের সঙ্গে কয়েক মাস ফ্রিল্যান্সিং ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’-এর কাজ করেছিলেন তিনি। কিন্তু মনোমালিন্য হওয়ায় বছরখানেক আগে কাজ ছেড়ে দেন। এ কাজের জন্য তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তিপত্র ছিল না।
আল-আমিন উল্লেখ করেছেন, তাকে কক্ষে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মুমিনুর রহমানের সঙ্গে আসা লোকজন প্রচুর মারধর করে। মুমিনুর তার মাথায় দুই লিটার পানির বোতল ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে যান। এ সময় তার মোবাইল ফোন থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেন তারা।
জ্ঞান ফেরার পর রাত আটটার দিকে জোরপূর্বক তার ডেবিট কার্ড নিয়ে গিয়ে ৪৫ হাজার টাকা তোলেন সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা। মুমিনুর ও তার অনুসারীরা তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। তারা জোরপূর্বক মিথ্যা জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেন এবং সেটির ভিডিও ধারণ করেন। হুমকি দিয়ে তারা বলেন, তাদের কথার বিপক্ষে কোনো কথা বললে এবং কোনো পদক্ষেপ নিলে তাকে মেরে ফেলা হবে। তাই জীবন বাঁচানোর জন্য তারা যা বলেছেন, তাই করেছেন তিনি।
অভিযোগে আল-আমিন আরও উল্লেখ করেছেন, তাকে ভয় দেখিয়ে স্ট্যাম্প পেপারে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু তার বোন জরুরি নম্বরে (৯৯৯) কল করার পর পুলিশ আসায় স্বাক্ষর নিতে পারেনি। ওই হলে অন্য একটি ঘটনায় সাংবাদিক, পুলিশ ও অন্যরা এলে রাত নয়টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে রাতেই জীবন বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অসম্পূর্ণ রেখে শরীয়তপুরে চলে যান তিনি। এখনো তাকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে।
আল-আমিন বলেন, তাদের কাছে তার পরীক্ষার প্রবেশপত্র আছে। তিনি ভয়ে আছেন। রাজশাহীতে আসতে পারছেন না। এ কারণে তিনি কুরিয়ারের মাধ্যমে অভিযোগ পাঠিয়েছেন। এ ঘটনার বিচার চান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে মুমিনুর রহমান বলেন, আল-আমিনসহ আরও কয়েকজনকে তাদের দুরবস্থার সময় তিনি চাকরি দিয়েছিলেন। এক-দেড় বছর চাকরি করার পর আল-আমিন বললেন, তিনি বিসিএস পরীক্ষা দেবেন। আল-আমিন চলে গিয়ে আরেকটি কোম্পানি খোলেন। সেখানে তার কোম্পানির ক্লায়েন্টদের নিচ্ছে তারা (আল-আমিন)। এতে তার ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত ১৭ আগস্ট বিষয়টি সুরাহার জন্য কথা বলতে বসেছিলেন। আল-আমিনকে কেউই মারধর করেননি।
৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মুমিনুর রহমান বলেন, সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা আলোচনার সময় ছিলেন। কিন্তু পরে কী হয়েছে, এটা বলতে পারবেন না তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্তকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা বলেছেন, তিনিসহ অনেকেই ১৭ আগস্ট আলোচনার সময় উপস্থিত ছিলেন। মুমিনুর ও আল-আমিনের মধ্যে ব্যবসায়িক একটি বিষয় ছিল। তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগটি মিথ্যা।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল