চলতি বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে দীর্ঘ এক মাস অচল ছিলো সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে ছিলো এই আন্দোলন। সেই আন্দোলনের ৮ মাস পর রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন- তাদের বেশিরভাগ দাবি পূরণ হয়নি। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে তারা ফের আন্দোলনে নামবেন বলে জানান।
আট মাস আগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনা ঘটে। শরীরে শটগানের ধাতব শ্রাপনেল, সাউন্ড গ্রেনেডের স্প্লিন্টারসহ ভয়াল সেই দিনের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন বহু শিক্ষার্থী। তবে ঘটনার ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও পূরণ করা হয়নি শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া।
রবিবার বেলা ২টায় শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৬ জানুয়ারির ওই নারকীয় ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে শাবিপ্রবির ইতিহাসে নজিরবিহীন এ ঘটনার মূল কুশীলব উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন ও আমরণ অনশনের একপর্যায়ে ঢাকা থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার এবং ইয়াসমিন হক ম্যাম আমাদের মাঝে আসেন। তাঁরা বলেছিলেন সরকারের উপর মহলের অনুরোধে তারা আন্দোলনস্থলে এসেছেন এবং আমাদের সমস্ত দাবি মেনে নেওয়া হবে এমন নিশ্চয়তা তাদের দেওয়া হয়েছে। তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে দীর্ঘ ১৬৩ ঘণ্টা যাবত অনশনরত ২৭ জন শিক্ষার্থী অনশন থেকে সরে আসেন।
তারা বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আমাদের সাথে আলোচনার জন্য সিলেটে আসেন। তাদের সঙ্গে আমাদের ৫টি দাবি এবং দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে ৮ দফা প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী তাঁর এখতিয়ারভুক্ত দাবি ও প্রস্তাবনাসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। তাঁর এখতিয়ারভুক্ত নয় এমন দাবিগুলোর বিষয়ে সরকারের উচ্চমহলকে অবহিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। কিন্তু বর্তমানে ৮ মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও আমাদের দাবিগুলোর অধিকাংশই এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘আমাদের প্রথম এবং প্রধান দাবি ছিল দ্রুততম সময়ে ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে উপাচার্যের পদ থেকে অপসারণ করে একজন গবেষণামনা, শিক্ষাবিদ ও অবিতর্কিত ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক। মন্ত্রী ওই বিষয়ে বলেছিলেন, ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আচার্যের কাছে উপস্থাপন করা হবে। আচার্য এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু এতদিন পরেও আমরা দেখছি শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলার মূল হোতা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ শাবিপ্রবির উপাচার্য পদে বহাল আছেন।
তারা বলেন, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাসমূহ অবিলম্বে প্রত্যাহার করার কথা ছিল। কিন্তু এত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয়নি। ১৬ জানুয়ারির হামলার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী সজল কুন্ডুকে অন্তত ৯ম গ্রেডের একটি চাকরি এবং নগদ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার স্পষ্ট আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সজল এখনও শিক্ষামন্ত্রী কর্তৃক প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ বা চাকরি কোনোটাই পাননি। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিনি যে ক্যাফেটেরিয়াটি চালাতেন সেটিও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তার একমাত্র কর্মসংস্থান কেড়ে নেওয়ায় এমনিতেই স্প্লিন্টার ও বোমার মারাত্মক ক্ষত নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেও হিমশিম খাওয়া সজলের সামনে নতুন আতঙ্ক হয়ে এসেছে চরম অর্থ সংকট। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রথম কিছুদিন সরকারি তত্ত্বাবধানে সজলের নিয়মিত চেকআপের ব্যবস্থা করা হলেও গত তিন মাস ধরে তাও বন্ধ। বারবার এ ব্যাপারে অবহিত করার পরও সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারো তরফ থেকেই আর সজলের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় সজল একাই উদ্যোগী হয়ে বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের নামে করা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, শিক্ষার্থীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়িত করতে হবে, অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়া কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দিতে হবে- এ তিন দফা দাবিতে গত ১১ দিন যাবত ক্যাম্পাসের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়াচ্ছেন। আমরা শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা সজলের দাবিগুলোর সাথে সম্পূর্ণভাবে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করছি। অবিলম্বে তার কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দিয়ে পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তার চাকরি ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- শাবিপ্রবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার রাজ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সজল কুন্ডু, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদিন, পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী নওরিন জামান, বিএমবি বিভাগের শিক্ষার্থী হালিমা খানম, পদার্থবিজ্ঞান সাবরিনা শাহরিন রশিদ ও সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী রাক্তিম সাদমান।
উল্লেখ্য, শাবিপ্রবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি দিনগত মধ্যরাতে ওই হলের ছাত্রীরা রাস্তায় নামেন। সেই থেকে আন্দোলনের সূচনা। একদিন পর (১৫ জানুয়ারি) আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে নতুন মাত্রা পায় আন্দোলন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ