প্রতিবছর প্রকৃতিতে শীত বাড়ার সাথে সাথে উত্তরের হিমালয়ের অঞ্চল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসা শুরু করে। যা এখন কেবলই অতীতে পরিণত হয়েছে। এবছর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অতিথি পাখির আগমন গত বছরগুলোর চেয়ে প্রায় ৯৫ শতাংশ কমেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯টি জলাশয়ের মধ্যে শুধুমাত্র সংরক্ষিত ডব্লিউআরচি'র পুকুরে প্রায় ৫ শতাধিক অতিথি পাখি আছে। তবে গত নভেম্বর মাসে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের পশ্চিম পাশের লেকেও ২ শতাধিক পাখি দেখা গেছে। যেগুলো কয়েকদিন পরেই আবার ফিরে গেছে। এরপর জাবিতে নতুন করে আর কোনো অতিথি পাখি আসেনি।
জানা যায়, ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম জাবিতে অতিথি বা পরিযায়ী পাখি আসে। সেবার ৪ হাজারের মতো পাখির দেখা মেলে। গতবছর এই সময়ে দেশি-বিদেশি প্রায় আড়াই হাজার পরিযায়ী বা অতিথি পাখি আসে। এর আগে, ২০২১ সালে মোট ৪ হাজার ৫০০ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখি আসে ২০২০ সালের কারোনাকালীন মৌসুমে। সেবার ৮ হাজারের বেশি অতিথি পাখি এসেছিল। ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আসা মোট পাখির সংখ্যা যথাক্রমে ৬৭৮০, ৪৭৩১, ৪৯৭৫, ৪৭০৯ টি ছিল বলে জানিয়েছে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।
দর্শনার্থীর উৎপাত, লেকের পাড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রদান না করা, লেকপাড়ে যানবাহন পার্কিং করা, জলাশয়ের কচুরিপনা ও আবর্জনা পরিষ্কার না করার কারণে পাখির আগমন কমেছে বলে জানিয়েছেন পাখি বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে অতিথি পাখিশূন্য ক্যাম্পাসে পাখির প্রয়োজনীয়তা ও পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষে শুক্রবার দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এবারের পাখি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৯ টায় জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম।
এসময়, উপাচার্য ক্যাম্পাসে পাখির অভয়ারণ্য নিশ্চিত করতে জনসমাগম রোধের উপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানান। এসময় আরও বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, বিশিষ্ট পাখিবিশারদ ইনাম আল হক, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী, আইসিইউএন-এর প্রতিনিধি সারোয়ার আলম দিপু, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি আরিফুর রহমান প্রমুখ। ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. এ টি এম আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান।
পাখিমেলায় বিগ বার্ড প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের সম্মাননা, গণমাধ্যমে পাখি বিষয়ক সেরা প্রতিবেদন এবং পাখি বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদন পুরস্কার প্রদান করা হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত পাখিমেলায় ছোটদের পাখি বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কুইজ, বই-পোস্টার প্রদর্শনী, সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পাখি দেখা, পাখি চেনার প্রতিযোগিতা এবং পাখি বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল