জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলমের অব্যাহতিসহ পাঁচ দফা দাবিতে টানা অবরোধ কর্মসূচি পালনের কারণে নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম ছাড়া প্রশাসনিক সব ধরনের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তবে এ স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে ও আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম।
বুধবার (১৩ মার্চ) সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত তৃতীয় দিনের মতো নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে এ অবরোধ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর আগে, গত ১১ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত চলে এ অবরোধ। অবরোধ চলাকালে প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকসহ সবগুলো ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারসহ কেউই তাদের কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি।
ফলে গত ৩ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফল প্রকাশ, পরীক্ষা সংক্রান্ত ফাইল স্বাক্ষর, শিক্ষা, উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তি শাখা, একাউন্টস, টিচিং, কাউন্সিল ও সাধারণ প্রশাসনসহ অন্যান্য সেকশনের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। আটকে আছে বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ জরুরি ফাইল।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অবরোধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সকল কার্যালয় ও শাখার প্রয়োজনীয় কাজ বন্ধ রয়েছে। যার কারণে আসন্ন ১৭ই মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি সংক্রান্ত সভা, পবিত্র রমজান মাস ও আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিতব্য সভা, এবং হিসাবাধ্যক্ষ অফিসের জরুরি কাজ করা এখনো সম্ভব হয়নি। আর এভাবে যদি অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন একাধিক জেষ্ঠ্য শিক্ষকরা।
আন্দোলনকারীদের অন্য দাবিগুলো হলো- সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করা, নিপীড়নের ঘটনায় বরখাস্তকৃত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিষয়ে অফিস আদেশ ও প্রজ্ঞাপন জারি, ক্যাম্পাসে মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এদিকে বুধবার বিকেল সাড়ে ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরাতন প্রশাসনিক ভবনে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দাবিগুলোর বিষয়ে একটি আলোচনা সভা করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম। এসময় উপাচার্য ১৮ মার্চের মধ্যে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলমের অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করলে অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ।
এবিষয়ে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব মাহফুজ ইসলাম মেঘ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপাচার্যের আশ্বাসে আমরা ১৮ মার্চ অর্ধবেলা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেছি। এরমধ্যে প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষ যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করে তাহলে উপাচার্য তার বিশেষ ক্ষমতাবলে তাদেরকে অব্যাহতি দিবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। এছাড়া অন্য দাবিগুলোর বিষয়েও তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। যদি দাবি বাস্তবায়িত না হয় তাহলে আমরা পুনরায় অবরোধ কর্মসূচিতে যাবো।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ