সিলেট মহানগরীর ডিস বা ইন্টারনেট ক্যাবলের জঞ্জাল সহসা পরিষ্কার হচ্ছে না। এ নিয়ে চলছে ত্রি-পক্ষীয় টানাপোড়েন। এক পক্ষে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও ডিস ব্যবসায়ীরা। অপর পক্ষে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।
কয়েকদিন আগে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের একমাসের মধ্যে তাদের তার বা ক্যাবল টানার বিকল্প ব্যবস্থার নোটিশ দিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তবে তা তেমন একটা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। এক্ষেত্রে ভেস্তে যেতে পারে সিসিক’র আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল প্রকল্পও যা আপাতত স্থগিত রয়েছে।
সিলেট মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকার মাথার উপর তাকানোর উপায় নেই। তারে তারে একেবারে তারময় অবস্থা। এটি যেমন নগরবাসীর চক্ষুপীড়ার কারণ, তেমনি নগরীর সৌন্দর্যহানিরও। বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বৈদ্যুতিক তারের সাথে খুব নিচু দিয়ে নিয়ে টানা হয়েছে এসব তার। এতে যখন-তখন বড়ধরনের দুর্ঘটনার আশংকাও প্রবল।
এদিকে সিলেটের বৈদ্যুতিক তারগুলো মাটির নিচ দিয়ে টানার একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পিডিবির (বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভলাপমেন্ট বোর্ড) সাথে আলাপ করে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নও শুরু করেছিলেন।
পাইলট প্রকল্প ছিল নগরীর ইলেক্ট্রিসাপ্লাই রোড থেকে আম্বরখানা পয়েন্ট, চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার -কোর্টপয়েন্ট-সিটি পয়েন্ট হয়ে সুরমা পয়েন্ট পর্যন্ত কাজ শুরুও হয়েছিল।
এরপর দক্ষ জনশক্তির অভাবে কাজটি বন্ধ হয়ে গেছে। মাসখানেক পর আবারো শুরু হওয়ার কথা। তখন বিদ্যুতের খুঁটিগুলো আর থাকার কথা নয়। তাই ইন্টারনেট ও ডিশ ব্যবাসয়ীদের সিটি কর্পোরেশন থেকে ১ মাসের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা করতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
তবে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ ব্যাপারে তাদের কিছুই করার নেই। কারণ, সরকার যে দুটি কোম্পানিকে (সামিট গ্রুপ ও ফাইবার অ্যাড) আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল টানার কাজ দিয়েছে তাদের কঠিন শর্ত মেনে ব্যবসা করা অসম্ভব।
এ প্রসঙ্গে কেবল ব্যবসায়ীদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত সূত্রগুলো জানিয়েছে, তারা মেয়রকে তাদের বক্তব্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তাদের কথা, সামিট বা ফাইবার অ্যাডের শর্ত মোতাবেক কাজ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তারা আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বের করে মাত্র কয়েকটি পয়েন্ট দিবে। সেখান থেকে আমরা গ্রাহক পর্যায়ে সংযোগ দিবো কিভাবে? আর ওরা এতে যে খরচ দাবি করছে, তাতে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ প্রায় ৪ থেকে ৫ গুণ বেড়ে যাবে।
এদিকে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে দেওয়া সময় পার হতে বাকি মাত্র ১৯/২০ দিন। অথচ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা হাতগুটিয়ে বসে আছেন।
সিলেট লোকাল ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অউনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও অ্যারোনেটের স্বত্ত্বাধিকারীদের একজন বাহার বলেন, আমরা মেয়রকে বলেছি, সামিটের দেওয়া পয়েন্টগুলো থেকে গ্রাহক পর্যায়ে সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা দিলে আমরাও সামিটকে দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে কেবল নেয়ার ব্যবস্থা করবো। অন্যথায় তা কীভাবে সম্ভব?
এদিকে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, বেঁধে দেওয়া সময় পার হলে আমাদেরও কিছু করার থাকবে না। আমরা খুঁটিগুলো উঠিয়ে দিবো।
তবে বিশ্লেষকদের মতে সেই সম্ভাবনা আদৌ নেই। কারণ, এটি হলে ব্যাংক বীমাসহ অনলাইন কেন্দ্রিক ব্যবসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সিলেটবাসীসহ সরকার। বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও মোটা অংকের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। সৃষ্টি হবে বড়ধরনের অচলাবস্থা।
মানে, সিলেট মহানগরীর মাথার উপর থাকা তারের জঞ্জাল সহসা অপসারণ হচ্ছে না!
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা