২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১৭:১৩

অর্ধেক অপারেশন করে ডাক্তার বললেন 'স্যরি'!, নিয়ে যেতে বললেন বিদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

অর্ধেক অপারেশন করে ডাক্তার বললেন 'স্যরি'!, নিয়ে যেতে বললেন বিদেশ

রোগী মনছব মিয়া

কাতারে দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণ হিঙ্গাজিয়ার মনছব মিয়া (৪২)। দুর্ঘটনার পর ডান পায়ের গোড়ালিতে অস্ত্রোপচার করে পাত বসিয়ে দিয়েছিলেন সে দেশটির চিকিৎসকরা। 

প্রায় পাঁচ মাস পর দেশে ফিরে তিনি পাত খুলতে গিয়েছিলেন সিলেটের অর্থোপেডিক্স সার্জন ডা. সুমন মল্লিকের কাছে। ডা. সুমন মল্লিক এমন অপারেশনকে খুবই সাধারণ হিসেবে আশ্বস্ত করেছিলেন রোগীকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হননি। 

অর্ধেক অপারেশন শেষে তিনি রোগীর স্বজনদের জানান, তার পক্ষে পাত খোলা সম্ভব নয়। পাত খোলার মতো যন্ত্রপাতি তার কাছে নেই। কাতারের যে হাসপাতালে তিনি অস্ত্রোপচার করে পাত লাগিয়েছিলেন সেখানেই এটি খুলতে হবে। তাকে বিদেশ (কাতার) নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। 

গত সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নগরীর মিরবক্সটুলাস্থ সিলেট ট্রমা সেন্টারে মনছব মিয়ার পায়ে অস্ত্রোপচার করেছিলেন ডা. সুমন মল্লিক। 

মনছব মিয়ার ভাতিজা মোজাহিদ আহমদ জানান, অস্ত্রোপচারের আগে ডা. সুমন মল্লিক কয়েকটি পরীক্ষা করান। পরীক্ষা করেই তিনি এরকম অস্ত্রোপচার খুবই সাধারণ বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। অস্ত্রোপচার করে পা থেকে পাত অপারেশনের জন্য ডাক্তারের সঙ্গে ৩২ হাজার টাকার চুক্তিও হয়। রাত দেড়টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয় মনছব মিয়াকে। 

প্রায় আধাঘণ্টা পর ট্রমা সেন্টারের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ডা. সুমন মল্লিকের বরাত দিয়ে রোগীর স্বজনদের জানান, অপারেশন ‘সাকসেসফুল’ হয়েছে। এখন তাদের ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। বাকি টাকা রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় দিলে চলবে। কথা মতো সঙ্গে সঙ্গে তারা ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এর কিছুক্ষণ পর ডা. সুমন মল্লিক অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে জানান, অপারেশন ‘সাকসেস’ হয়নি। পাতের মধ্যে যে স্ক্রু মারা সেটা খোলার মতো কোন যন্ত্রপাতি তার কাছে নেই। এমনকি এই পাত বাংলাদেশের কোন ডাক্তারই খুলতে পারবে না বলে রোগীর স্বজনদের জানান তিনি। পাত খোলার জন্য রোগীকে কাতার নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে চলে যান তিনি। 

এদিকে, চিকিৎসকের কাছ থেকে এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েন রোগীর স্বজনরা। ট্রমা সেন্টার কর্তৃপক্ষও ২০ হাজারের মধ্যে ৮ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে রোগীকে বাড়িতে নিয়ে যেতে চাপ দেন স্বজনদের। 

সকালে এমন খবর পেয়ে ট্রমা সেন্টারে যান গণমাধ্যমকর্মীরা। এসময় ডা. সুমন মল্লিক এমন ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, 'সব অপারেশন সাকসেসফুল হয় না। তবে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। অর্ধেক অপারেশনের পর তিনি দেখেছেন মনছব মিয়ার পায়ে যে পাত লাগালো সেটি খোলার মতো ইকুপমেন্ট তার কাছে নেই। তাই তিনি কাতার ফিরে গিয়ে পাত খোলার পরামর্শ দিয়েছেন।'

অন্যদিকে, গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতির পর ট্রমা সেন্টার কর্তৃপক্ষ মনছব আলীর কাছ থেকে নেয়া পুরো টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। 

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর