শ্রী মহিন্ড কুমার। বয়স তার ৭০ বছর। বার্ধক্যের কারণে রোগা শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। তবুও এ বয়সে দু’মুঠো খাবারের জন্যে সকাল-সন্ধ্যা হাড়-ভাঙা খাটুনি তার। জীবনের শেষ সময়ে একটু প্রশান্তির আশায় বয়স্ক ভাতার জন্যে ধরনা দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। কিন্তু আশ্বাস মিললেও এখনো জোটেনি কার্ড।
শ্রী মহিন্ড কুমার সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাধাকোনা গ্রামের বাসিন্দা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ৭০ বছর। পেশায় তিনি একজন মৎস্যজীবী। প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে বিশেষ কায়দায় নদীতে জাল টেনে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। বর্তমানে শরীরে না মানলেও কষ্টসাধ্য এ কাজ করেই ৮ সদস্যের পরিবারে দিচ্ছেন জীবিকার যোগান।
সম্প্রতি বালাগঞ্জ বাজারের পাশে কুশিয়ারা নদীতে মাছ ধরার সময় দেখা হয় তার সাথে। এসময় তিনি তার নাতি বিকাশকে নিয়ে নদীতে জাল ফেলছিলেন। যে জালের স্থানীয় নাম ‘গাইজাল’। ২০০-২৫০ হাত লম্বা বড় রশির মধ্যখানে মাছ আটকানোর জন্যে মাত্র ১০ হাত লম্বা জাল যুক্ত রয়েছে এতে। রশির এক মাথা নদীর ধারে বেঁধে রেখে, নৌকায় করে মাঝ নদী পর্যন্ত চক্রাকারে রশি ঘুরিয়ে ফের পাড়ে নিয়ে আসা হয় রশির অপর মাথা। পরে দুজন ৮-১০ হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে রশির দুই মাথা ধরে ক্রমান্বয়ে টানেন জাল।
১০-১৫ মিনিট এভাবে টানার পর ঘোলশা, বাগাইড়, গাগলা টেংরা, বাইমসহ নানা জাতের মাছ নিয়ে উঠে আসে জাল। মাছ ধরার পর ফের একই কায়দায় ১৫-২০ বার এভাবেই নদীতে জাল টানেন তিনি। এতে প্রতিদিন ১০০০-১৫০০ টাকার মাছ শিকার করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ভাগ করে নেন দুজনে।
তিনি অক্ষেপ করে বলেন, আগে শরীরে বল ছিল। মাছও ধরেছি অনেক। এখন জাল টানা খুবই কষ্টসাধ্য। কার্ড পেলে কিছুটা স্বস্তি হবে এই আশায় ৬ মাস হলো বয়স্ক ভাতার জন্য মেম্বরের কাছে ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজাদি দিয়েছে। কিন্তু এখনো পাইনি।
এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুস সহিদের সাথে কথা বলতে চাইলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশ কুমার সিংহ ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে বলেন, সমাজসেবা অফিসে আবেদন করে থাকলে বৃদ্ধের ভাতার কার্ডের জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই