সিলেট-৩ আসনে স্থগিত হওয়া উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ এখনো ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আসনটিতে নির্বাচন হতে হবে আসন্ন ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। তাই এই টাইমলাইন ধরেই নানা কৌশলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। নিজেদের ‘ভোট ব্যাংক’ অক্ষত রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ‘ঘর ভাঙার’ মিশনও চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব ও জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক। এমন গুঞ্জন রয়েছে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে।
আর অপর দুই প্রার্থীর মধ্যে সাবেক সাংসদ শফি আহমেদ চৌধুরী ব্যক্তি ইমেজকে কাজে লাগিয়ে পার হতে চাইছেন নির্বাচনী বৈতরণী। এই তিনজনের বাইরে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়াকে নিয়ে অবশ্য কোন আলোচনাই নেই নির্বাচনী এলাকায়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ২৮ জুলাই হওয়ার কথা ছিল সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচন। কিন্তু কঠোর লকডাউনের মধ্যে নির্বাচন না করতে ২৬ জুলাই উচ্চ আদালতে আবেদন করেন সুপ্রিমকোর্টের ৬ আইনজীবী ও নির্বাচনী এলাকার সাতজন ভোটার। শুনানি শেষে আদালত ৫ আগস্ট পর্যন্ত ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন। ফলে প্রার্থীরাও পেয়ে যান প্রচারণার বাড়তি সময়।
নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ভোটের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার পাশাপাশি হাবিব ও আতিক আশ্রয় নিয়েছেন একে অন্যের ‘ভোট ব্যাংক’ ভাঙার। একজন অন্যজনের দলের নেতাকর্মীদের ‘ম্যানেজ’ মিশনে নামেন। এতে দুই প্রার্থীই কিছুটা সফলও হয়েছেন বলে মনে করছেন ভোটাররা।
গত ৯ আগস্ট মোগলাবাজার থানার দাউদপুর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির উদ্যোগে নির্বাচনী মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভার সভাপতি মোগলাবাজার থানা জাপার সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার আহ্বান জানানোর পরিবর্তে নিজেই ক্ষোভ ঝাড়েন দলীয় প্রার্থী আতিকের বিরুদ্ধে। প্রার্থীর বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে তিনি তার বক্তব্যের মধ্যেই জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন। এর আগে একই সভায় মোগলাবাজার থানা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমদও বক্তৃতা দিতে এসে পদত্যাগ করেন। তারা পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে সভায় উপস্থিত অনেক নেতাকর্মীও হাততালি দিয়ে তাদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
নির্বাচনী সভায় পদত্যাগের এই ঘটনাকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। তিনি বলেন, অন্য এক প্রার্থীর পক্ষে ম্যানেজ হয়ে এই পদত্যাগ নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবকে ইঙ্গিত করে আতিক বলেন, ‘সিলেট-৩ আসনে সাধারণ মানুষের মধ্যে লাঙ্গলের পক্ষে জোয়ার ওঠেছে। এটা দেখে প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থী সুবিধাবাদী কিছু নেতাকর্মীকে দিয়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্র লাঙ্গলের বিজয় ঠেকাতে পারবে না।’
এদিকে, আওয়ামী লীগের একটি অংশকে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করছেন আতিকও। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত কয়েকজন নেতা ও প্রয়াত সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বলয়ের কতিপয় নেতাকে গোপনে নিজের পক্ষে রাখার চেষ্টা করছেন আতিক। এই মিশনে অনেকটা সফলও তিনি। নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত অনেককেই দেখা যায়নি। কেউ কেউ দায়সারাভাবে নামলেও অনুসারীদের আতিকের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তবে আওয়ামী লীগের ঘরে আতিকের হানা দেয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, সিলেট-৩ আসনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ। নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিতে তারা স্বেচ্ছায় কাজ করছেন। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদেরই ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারছেন না আতিক। নৌকার পক্ষে গণজোয়ার দেখে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও এখন নৌকার পক্ষে কাজ করছেন।
এদিকে, লকডাউন শিথিলের পর পুনরায় প্রচারণায় নেমেছেন বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত সাবেক সাংসদ শফি আহমেদ চৌধুরী। প্রচারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির পদবীধারী নেতারা সাংগঠনিক শাস্তির ভয়ে প্রকাশ্যে কাজ না করলেও গোপনে তারা সহযোগিতা করছেন। তবে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী ও সমর্থকরা তার পক্ষে প্রচারণায় আছেন। শফি আহমেদ চৌধুরী বলেন, সংসদ সদস্য থাকাকালে তিনি এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। ব্যক্তি উদ্যোগেও তিনি এলাকার শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক কাজ করছেন। তাই তার ব্যক্তি ইমেজ ও উন্নয়ন বিবেচনায় সাধারণ মানুষ তার পক্ষে আছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১১ মার্চ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেট-৩ আসনের টানা তিনবারের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। এরপর এই আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।