দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাড়ন্ত শিশুদের ইউনিফর্ম ছোট হয়ে গেছে। হঠাৎ স্কুল খোলার ঘোষণা আসায় অভিভাবকেরা ছুটছেন নতুন ইউনিফর্ম বানাতে। তাই ঈদের মৌসুম ছাড়াও হঠাৎ করে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সিলেটে দর্জিপাড়ার কারিগররা।
২০২০ সালে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন আরিফ আহমদ। নগরীর বাগবাড়ি এলাকায় তার বাসা। স্কুল বন্ধ থাকা এই প্রায় দুই বছরে লম্বা হয়েছে আরিফ, বেড়েছে শরীরও। এখন আর আগের স্কুলড্রেস শরীরে হয় না। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খোলার ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে আরিফের মা শামীমা বেগম ছেলের ইউনিফর্ম বের করে দেখেন- শার্ট আটোসাটো হয়ে গেছে। প্যান্ট কোমর পর্যন্ত আসছে না, জুতাজোড়াও পায়ে ঢুকছে না।
শামীমা জানান, এখন পর্যন্ত শুনেছেন ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস এক দিন হবে। ক্লাসে যাওয়ার আগে ছেলের শার্ট-প্যান্ট বানাতে হবে, জুতাও কিনতে হবে। তিনি জানান, একই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে তাঁর মেয়ে (৬)। মেয়েরও ইউনিফর্ম–জুতা ছোট হয়েছে। সেগুলোও নতুন লাগবে।
স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত আসায় শামীমার মতো আরও অনেক অভিভাবককে, বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বাড়ন্ত বয়সের শিশুদের নতুন ইউনিফর্ম সংগ্রহের জন্য ছুটতে হচ্ছে। কারও ইউনিফর্ম ছোট হয়ে গেছে। কারও ইউনিফর্ম পুরোনো হয়ে গেছে।
সিলেট নগরী ও শহরতলির স্কুলগুলোর অধিকাংশেরই নির্ধারিত এক বা একাধিক দরজি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্কুলশিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে ইউনিফর্ম মাপ দিয়ে বানিয়ে নেন। আবার কোনো কোনো স্কুলে বিভিন্ন মাপের তৈরি ইউনিফর্ম কিনতে পাওয়া যায়।
দেশে কোভিড মহামারি শুরু হওয়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সরকার। দেশে প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে দেড় লাখের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সোয়া তিন কোটির মতো। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার।
সরকারের ঘোষণা আসার পরপরই শিক্ষার্থীদের নতুন ইউনিফর্ম তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়া নগরীর শিবগঞ্জ এলাকার মিজান এক দর্জি বলেন, গত তিন–চার মাসে এক সপ্তাহে একটি করে অর্ডার পেয়েছিলেন তিনি। তবে এ সপ্তাহে সেই চিত্র পাল্টে গেছে। গত দু'দিনে তিনি ৫০টির উপরে ইউনিফর্মের অর্ডার পেয়েছেন। এর মধ্যে পঞ্চম, অষ্টম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ড্রেস বেশি।
তিনি জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানে দরজি আছেন ৫ জন। অতিরিক্ত অর্ডারের জন্য এখন তাঁকে আরও ৫ জন দরজি চুক্তিভিত্তিক নিতে হয়েছে। আগে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান খোলা থাকত। দু'দিন ধরে সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত টানা কাজ করতে হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ