সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরের মাউতি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে তিন জেলার বোরো ধান।
রবিবার সকালে বাঁধ ভেঙে বিকেল পর্যন্ত পানি ঢুকছে হাওরে। এতে করে নেত্রকোনা জেলার কালিয়াজুড়ি উপজেলা কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন, কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার ধনপুর এবং সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আটগাঁও, হবিবপুর,শাল্লা সদর, বাহারা ইনিউন ও দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নসহ অন্তত ৭ ইউনিয়নের ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শঙ্কা রয়েছে।
সন্ধ্যা ৬ টার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাঁধের ভাঙা বন্ধে চেষ্টা করছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন।
বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে কৃষি বিভাগ বলছে ছায়ার হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে না। স্থানীয় কৃষকদের দাবি এখনো হাওরে ৪০ থেকে -৪৫ ভাগ ধান কাটার বাকি রয়েগেছে। হঠাৎ বাঁধ ভেঙ্গে হাওরে পানি ঢুকায় শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে পারতেছেন না তারা। তাছাড়া হাওরে থাকা কাটা ধানও পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ি ছায়ার হাওরে সুনামগঞ্জের ৪ হাজার ৬০০ হেক্টর ধান আবাদ করা হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত হাওরে ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম।
তবে হাওর পাড়ের কৃষকদের দাবি ধান কাচা থাকার কারণে এখনো হাওরে ৪০-৪৫ ভাগ কাটা হয়নি। তাছাড়া যে ধান কাটা হয়েছে তা মারাই বা প্রক্রিয়াকরণ না করায় পানি প্রবেশের ফলে হাওরেই আরও ১০% ধান নষ্ট হয়ে যাবে।
ছায়ার হাওরের কৃষক কমল দাশ জানান, সকাল থেকেই হাওরে পানি ঢুকা শুরু করেছে। গতকাল কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে প্রচুর বৃষ্টি হয় ওখান থেকে সকালে মাউতি বাঁধে ফাটল দেখা দেয় পরে পানি চাপে বাঁধ উপচে সবদিক দিয়ে পানি প্রবেশ করা শুরু করে, আমার অনেক জমির ধান ওই পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
বাবলু দাস নামে আরেক কৃষক বলেন, আমি দেড় হাল ছমি চাষ করে ছিলাম। মাত্র ৮ কেয়ার জমি কাটছি। বাকি ধান কাটতে পারিনি। হাওরে পানি ঢুকার কারনে বাকি ধানের আসা ছেড়ে দিয়েছি। এখন ৪০ ভাগ ধান কাটা বাকি।
সমীর বিশ্বাস নামে আরেক কৃষক বলেন নয় কেয়ার জমি চাষ করে মাত্র ২ কেয়ার ধান কাটছি। বাকি সব পানির নিচে। এখন নিজেই চলবো কি করে আর পরিবারকেই চালাবো কি করে।
তবে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব দাবি করেন, এই হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ। তিনি জানান, নদীর পানিতে চাপ বেড়েছে। পানির চাপে আজ সকালে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করা শুরু করে তবে ক্ষতি তেমন একটা হবে না কারণ এই হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ।
শাল্লা উপজেলার বাহারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু জানান, শাল্লার ছায়ার হাওরের জমি তিন জেলায় গিয়ে পড়েছে, সুনামগঞ্জের শাল্লা নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি ও কিশোরগঞ্জের ইটনায় পড়েছে তবে বেশি অংশ সুনামগঞ্জেরই, তবে ইউএনও মহোদয় যে ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গিয়েছে বলছেন সেই তথ্য মানতে পারলাম না কারণ হাওরে অর্ধেক ধান রয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন ছায়ার হাওরে আর মাত্র ২০০ হেক্টর জমি আছে। হাওরে পানি প্রবেশ করলেও ধানের তেমন ক্ষতি হবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুদ্দোহা বলেন, আমরা এখনো বাঁধে আছি। শ্রমিক আনা হচ্ছে। জিউ ব্যাগ ফেলে ভাঙা বন্ধের চেষ্টা করছি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত