বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে টানা দুই বছরে রেলের আয় বেড়েছে প্রায় ৫’শ ৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বশেষ পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে গত বছর আয় বেড়েছে ১৮৩ কোটি টাকা। এর আগের বছর আয় বেড়েছে প্রায় ৪’শ কোটি টাকা। টানা দুই বছর রেকর্ড সংখ্যক রেলওয়ের রাজস্ব আয় বেড়েছে। রেলের লোকসানের গতি থেকে আয়ে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাচ্ছে রাষ্ট্রয়াত্ত্ব গণ পরিবহনের এ সংস্থাটি। তবে কয়েক বছরের মধ্যে রেলওয়ের আয়-ব্যয়ের ব্যবধান কমে এসে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে জানান পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা (সিসিএম) সরদার শাহাদাত আলী।
তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান সরকার রেলের যে উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে, তা দৃশ্যমান হচ্ছে দ্রুত সময়ে। এর মধ্যে অনেক প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে ট্রেন চলাচলসহ আয়ের রাস্তা আরো বেড়েছে গেছে। বিভিন্ন রুটে নতুন নতুন ট্রেন দেয়া হয়েছে। আগের তুলনায় কয়েক বছর ধরে রেলওয়ের সেবার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে। রেলকে আরো গতিশীল ও আধুনিকায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপির নেতৃত্বে রেলওয়ে প্রশাসন কঠোর মনিটরিং এবং প্রতিনিয়ত স্ব স্ব দপ্তরের দায়িত্বশীলরা কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
একটি হিসাব পর্যালোচনা করে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে রেলের সর্বমোট আয় ছিল ৯৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এর পরের অর্থ বছরে রেলের আয় কমে হয় ৯০৪ কোটি টাকা। তবে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে রেলের আয়ে বড় ধরনের উন্নতি হয়। সেবছর রেলওয়ে ১ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা আয় করে যা আগের অর্থ বছরের চেয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বেশি। সর্বশেষ অর্থ বছরেও রেলওয়ে আয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে রেলওয়ে আয় করেছে ১ হাজার ৪৮৬ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা। যা আগের বছরের চেয়ে ১৮২ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ টানা দুই বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আয় করেছে রেলওয়ে।
সম্প্রতি রেলের সর্বশেষ অর্থ বছরের আয়ের হিসাব শেষ হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর রেলওয়ে প্রধান অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তার দফতর থেকে রেলভবনে পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে রেলের সর্বমোট আয় হয়েছে ১ হাজার ৪৮৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে আয় করেছে ৮৯৩ কোটি ৯৭ লাখ ২১ হাজার টাকা। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে আয় করেছে ৫৯২ কোটি ১৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা। আগের অর্থ বছরের চেয়ে ১৮৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করেছে রেলওয়ে।
রেলের হিসাব বিভাগের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বশেষ অর্থ বছরে যাত্রীখাতে আয় হয়েছে ৯০৫ কোটি টাকা যার মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৫৮৬ কোটি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৩১৯ কোটি টাকা। যাত্রী ব্যতিত খাতে আয় হয়েছে ১৯০ কোটি, পণ্য পরিবহন খাতে ২৮৬ কোটি, বিবিধ খাতে ২৭৬ কোটি টাকা আয় হয়েছে। যদিও বিবিধ খাতের আয় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের চেয়ে কমেছে সর্বশেষ অর্থ বছরে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বিবিধ খাতে ৩০৬ কোটি টাকা আয় হলেও সর্বশেষ অর্থ বছরে আয় হয়েছে ২৭৬ কোটি টাকা।
রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে ১০০টি মিটার গেজ কোচ এবং ভারত থেকে ১২০টি ব্রডগেজ কোচ আমদানির মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর রেলের বিভিন্ন আন্ত:নগর ট্রেনে নতুন করে কোচ সংযোজন শুরু হয়। রেলওয়ে নতুন কোচের মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশন অনুযায়ী কোচ দেয়া হয়। এরপর পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস চালু করা হয়। আন্ত:নগর ও লোকাল বেশ কয়েকটি ট্রেন বেড়ে যাওয়ায় যাত্রী খাতে আয়ের প্রভাব পড়েছে বেশী। তারা বলেন, সর্বশেষ এক বছরে মাত্র ২২০টি কোচ আমদানি করায় রেলের আয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। রেলের সবগুলো ট্রেনে পর্যাপ্ত কোচ ছাড়াও চাহিদা অনুযায়ী ইঞ্জিন আমদানি করা গেলে রেলের আয় আরো দ্রুত বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
রেলওয়ের তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিট লোকসান ছিল ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ওই সময়ে রেলের ব্যয় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। সর্বশেষ অর্থ বছরেও রেলের ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এই হিসাবে ধীরে ধীরে হলেও রেলের আয়-ব্যয়ের ব্যবধান কমে আসছে। চলতি অর্থ বছরে রেলওয়ে ২ হাজার কোটি টাকার আয় লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে পারলে রেলের লোকসান এক তৃতীয়াংশে নেমে আসবে বলে মনে করছে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন