স্বামী নিজ স্ত্রীকে চরমভাবে মারছে। এক পর্যায়ে কোদালের দাঁড় (বড় লাঠি) নিয়েও আঘাত করেন। বার বার আঘাতে জ্ঞান হারান স্ত্রী। জ্ঞান ফিরার পর ফের চলে পিটুনি। আহত অবস্থায় স্ত্রীকে ঘরে তালাবদ্ধ রেখে চলে যান স্বামী। পরদিন পিতা এসে স্থানীয়দের সহায়তায় মেয়েকে উদ্ধার করা হয়।
অবিশ্বাস্য, চরম অমানবিক ও বর্বর এ ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম গোঁয়াখালী এলাকায়। এ ব্যাপারে গৃহবধূ বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় একটি মামলা (২৯/১৯) দায়ের করেন।
আহত গৃহবধূর নাম রেবেকা সুলতানা (৩২) এবং স্বামীর নাম সাইফুদ্দিন খালেদ। ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল দুই জনের বিয়ে হয়। তাদের দু’টি পুত্র সন্তান আছে। বড় সন্তান তৃতীয় শ্রেণিতে ও ছোট সন্তানের বয়স তিন বছর। রেবেকার বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার বরমা ইউনিয়নের কেশুয়া গ্রামে। সাইফুদ্দিন খালেদ পেকুয়ার পশ্চিম গোঁয়াখালী এলাকার মৃত আনোয়ারুল আজিমের ছেলে।
জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট শুক্রবার রাত ১১টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত স্বামী সাইফুদ্দিন খালেদ এ বর্বরতা চালান বলে অভিযোগ করেছেন গৃহবধূ ও তাঁর পরিবার। পরদিন ১৭ আগস্ট প্রথমে আনোয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ওইদিনই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি চমেক হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসাধীন আছেন। ওসিসিতে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে সেখানকার প্রতিবেদনের (স্মারক ৯৯/২) প্রেক্ষিতে পেকুয়া থানায় রেবেকা সুলতানা বাদি হয়ে একটি মামলা (২৯/১৯) দায়ের করেন।
রেবেকার বাবা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘বড় লাটির আঘাতে দুই হাতের মাংস প্রায় পচে যায় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তাই তার রান থেকে মাংস নিয়ে হাতে লাগানো হবে। এ জন্য তাকে গত সোমবার ওসিসি থেকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়।
বুধবার ওপারেশন হওয়ার কথা। অপারেশন শেষে আবারো ওসিসিতে আনা হবে। হাত ছাড়াও পিটে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতে জখম হয়ে যায়। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
তিনি বলেন, ‘ওইদিন ভেবেছিলাম, আমার মেয়ে বেঁচে নেই। শরীরের এমন কোনো স্থান নেই, যেখানে লাঠির আঘাত পড়েনি। কিছুক্ষণ পরপর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিল। পুরো শরীর কালচে আকার ধারণ করেছে। চিকিৎসার পর এখন অবস্থা কিছুটা ভালো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে স্বামী সাইফুদ্দিন খালেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পেকুয়া থানার সহকারি পরিদর্শক শিমুল বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক। এ ব্যাপারে আমরা বাদীর বাবার সঙ্গে কথা বলব। এরপর আসামি ধরার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করব।’
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাদকাসক্ত স্বামী নিয়মিত বাড়ির টংঘরে বসে মাদক সেবন করে। গত ১৬ আগস্ট রাতেও বাড়ির টংঘরে বসে মাদক সেবন করছিলেন। রাত ১১টার দিকে তিনি ভাত খেতে চান। এরই মধ্যে তিনি আবারো টং ঘরে গিয়ে বসে পড়েন। ওই সময় টংঘরে গিয়ে ভাত দেওয়ার কথা বললে ‘তুই এখানে কেন এসেছিস’ বলে গালাগাল শুরু করেন। এরপর ঘরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে কোদালের দাঁড় (বড় লাঠি) নিয়ে পেটান। পিটুনিতে অজ্ঞান হয়ে গেলে পানি ঢেলে জ্ঞান ফিরলে আবারও পেটান। এভাবে ভোর ছয়টা পর্যন্ত পেটানোর পর ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বের হয়ে যান সাইফুদ্দিন। যখন তিনি ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন তখন রেবেকার জ্ঞান ছিল না। দুটি সন্তান সারা রাত কান্না করেও তাকে নিবৃত্ত করতে পারেনি বলে অভিযোগ পরিবারের।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার