৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৮:২৩

থামছেই না হালদা নদীতে ডলফিনের মৃত্যু

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম:

থামছেই না হালদা নদীতে ডলফিনের মৃত্যু

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এবং হালদা নদীতে বিচরণ করে ডলফিন। কিন্তু এ দুই নদীতে ডলফিনের মৃত্যু থামছেই না। বৃহস্পতিবার দুপুরেও উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর আকবরিয়া এলাকা থেকে একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর ডলফিনটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে।    

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডলফিনের চোখ নেই। মূলত ইকোসাউন্ড দিয়ে এরা চলাফেরা ও খাবার সন্ধান করে। এদের শরীরের গঠনও নরম প্রকৃতির। ড্রেজারের প্রপেলার বা অন্য কোনো অংশের আঘাত এরা সহ্য করতে পারে না। তাই কোনো সামান্য আঘাতেই তাদের মৃত্যু হয়ে যায়।  

অভিযোগ আছে, হালদা নদীর মা মাছ রক্ষায় নদীতে ড্রেজার ও ইঞ্জিন চালিত বোট চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু মাছ অসাধু কিছু ব্যাক্তি এ নিষেধাজ্ঞা মানছে না। তারা নানাভাবে ইঞ্জিনচালিত বোট চালাচ্ছে। ফলে ইঞ্জিনের পাকায় ধাক্কা খেয়ে মারা যাচ্ছে ডলফিন। মানবসৃষ্ট আগ্রাসনে মরছে ডলফিন। কমছে বিপন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী এ প্রাণী। কোনো মতেই থামছে না হালদা নদীতে ডলফিনের মৃত্যু।  

চবি হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরোটরি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মানব আগ্রাসনে মরে ভেসে উঠছে ডলফিন। ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর হালদা নদীর রাউজান উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকায় ৩৭ কেজি, দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ১ ফুট ১০ ইঞ্চি সাইজের একটি মৃত ডলফিন ভেসে উঠে। ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি গড়দুয়ারা স্লুইস গেইট এলাকা এবং ৫ জানুয়ারি গচ্ছাখালি খাল থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি মৃত ডলফিন। ১৯ জানুয়ারি গড়দুয়ারা ইউনিয়নের গচ্ছাখালী খালের কান্তর আলী চৌধুরী হাট বাজারের সেতুর নিচে ভেসে ওঠে ৭০ কেজি ওজন ও প্রায় ছয় ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি মৃত ডলফিন। ২৭ ডিসেম্বর গচ্ছাখালি খালের মাস্টার বাড়ি কালভার্টের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি। গত ১৪ এপ্রিল হালদা নদীর মদুনাঘাট সেতু সংলগ্ন এলাকায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক মৃত একটি ডলফিন ভেসে ওঠে। ডলফিনের শরীরের মাঝ বরাবর প্রায় দ্বিখণ্ডিত। গায়ে পচন ধরেছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত ২২টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়।      

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘দুপুরে আকবরিয়া এলাকা থেকে একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। এটির গায়ে একটি আঘাতও আছে। এটি হয়তো কয়েকদিন আগেই মারা গেছে। তবে উদ্ধারকারীরা বলছেন, শিকার ধরার সময় ব্লকে মাথায় আঘাত পেয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘হালদায় ২০০টির মতো ডলফিন আছে। এর মধ্যে ২২টি মারা গেল। আগে একসময় কর্ণফুলীতে নিয়মিত ডলফিন দেখা যেত। এখন দেখা যায় না বললেই চলে। এ অবস্থা চলতে থাকলে হালদাও ডলফিনশূন্য হয়ে যাবে। তাই ডলফিন রক্ষায় অবিলম্বে নদীতে ইঞ্জিনচালিত বোট সম্পূর্ণ বন্ধ, নদীটিকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) ও ডলফিনের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা জরুরি।’  

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়তই হালদা নদীতে অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু রাতের আধারে এক শ্রেণীর অসাধু চক্র মাছ শিকার ও ইঞ্জিনচালিত বোট চালায়। পরে আমরা রাতেও অভিযান পরিচালনা করি। ইতোমধ্যে ৭৩টি অভিযানে ১২টি বোট ধ্বংসও করা হয়।’   

বিডি প্রতিদিন/মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর