ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে করছে মাইকিং। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) খুলেছে কন্ট্রোল রুম, নগড়জুড়ে চলছে সতর্কতা মাইকিং। সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রস্তুত রেখেছে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর সমন্বয়ে ২৯০টি টিম এবং জরুরি প্রয়োজনে খুলেছে কন্ট্রোল রুম। চট্টগ্রাম বন্দর জারি করেছে নিজস্ব সতর্কতা সংকেত ‘অ্যালার্ট-৩’।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। হামুনের কারণে চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ‘হামুন’ আরও উত্তর ও উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার সকাল থেকে দুপুর নাগাদ ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮. মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।
জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সরে যেতে করা হচ্ছে মাইকিং। নগরের আকবর শাহ ঝিল ১, ২ ও ৩ ও বিজয়নগর পাহাড়, শান্তিনগর পাহাড়, বেলতলী ঘোনা পাহাড় এলাকা এবং ষোলশহর সতর্কতায় মাইকিং কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন খুলেছে কন্ট্রোল রুম (+৮৮০২৩৩৩৩৫৭৫৪৫)। তাছাড়া, চট্টগ্রামের ছয় উপকূলীয় উপজেলায় ৬০৯টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫৭টি চালু করা হয়েছে। নগরের ১১৬টির মধ্যে ১৯টি চালু আছে। আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনা
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপজেলা পর্যায়ে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও নগদ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। নগরের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে চলছে মাইকিং, সরিয়ে নেয়া হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে।
কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক বলেন, টানা বৃষ্টি হওয়ায় মানুষের জানমাল রক্ষায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় নগরীর ৬ জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নেতৃত্বে মহানগরের ৬টি সার্কেল কাজ করছে।
প্রস্তুত ২৯০টি মেডিকেল টিম
ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন প্রস্তুত রেখেছে ২৯০টি মেডিকেল টিম। ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী, ঘূর্ণিঝড়কালীন এবং পরবর্তীতে যেকোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে চালু করা হয়েছে বিশেষ কন্ট্রোল রুম।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার ২০০টি ইউনিয়নের ২০০টি মেডিকেল টিম, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি করে ৭৫টি টিম, ৯টি আরবান ডিসপেনসারিতে ৯টি মেডিকেল টিম, স্কুল হেলথ ক্লিনিকে ১টি মেডিকেল টিম, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫টি মেডিকেল টিমসহ ২৯০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় ২৯০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাছাড়া, ২৪ ঘণ্টা একটি কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।
বন্দরের অ্যালার্ট ৩ জারি
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বন্দর নিজস্ব ‘অ্যালার্ট ৩’ জারি করেছে। আজ সকালে বন্দর ভবনে কর্মকর্তাদের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। তাছাড়া, খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার বিশেষ কনট্রোল রুম। বন্দরের মেরিন ডিপার্টমেন্ট নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশের সহায়তায় বন্দর চ্যানেল ও জেটি থেকে ছোট বড় সব জাহাজ বহির্নোঙরে কিংবা শাহ্ আমানত সেতুর পূর্বপাশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ যাতে বন্দর চ্যানেল, জাহাজ, হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট, কার্গো ও কনটেইনারের ক্ষতি না হয় সে জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব সতর্কতা সংকেত ‘অ্যালার্ট- ৩’ জারি করা হয়েছে।
পাহাড় ধসের শঙ্কা
ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে বাড়ছে বৃষ্টি। অতিবৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ধসের শঙ্কা থাকে। আবহাওয়া অফিসও ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় আছে। এর মধ্যে সরকারি বেসরকারি ১৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৮৩৫ পরিবার বসবাস করে। অন্যদিকে, ঝুকিপূর্ণ পাহাড়ে গত ১৫ বছরে মারা যান প্রায় ৩৫০ জন। বর্ষাকালে ভারী বর্ষণ হলেই পাহাড় ধস হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল