প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে দুয়ার খুললো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের।
শনিবার বেলা পৌনে ১২টায় চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম এই সুড়ঙ্গপথের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মাধ্যমে টানেলের যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। এটিই দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ।
এর আগে চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা প্রান্তে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সহ ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতায় উদ্বোধনী পর্বটি ছিল প্রাণের উচ্চস্বরে পরিপূর্ণ।
চট্টগ্রামের মানুষের অভূতপূর্ব প্রাণের উচ্ছ্বাস এবং ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে টানেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বরণ করল চট্টগ্রাম। উদ্বোধনী পর্বে মনোমুগ্ধকর নৃত্য, আতশবাজি বর্ণিল রঙ আকাশে ছড়িয়ে দিয়ে অনন্য সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয় ।
এ সময় সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা .দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রামের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্তের দিকে টানেল অভ্যন্তর হয়ে প্রবেশ করেন এবং সেখানে এক জনসভায় উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন শেষে নিজের ও তার বহরের জন্য টানেল অতিক্রমে টোল প্রদান করেন।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ নির্মাণে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ সুদে এ প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। বাকি টাকার জোগান দেয় বাংলাদেশ সরকার। প্রায় সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকা ব্যয় নির্মিত এই টানেলটি চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি নির্মাণ করছে।
দুটি টিউবের চার লেনের সড়কের মাধ্যমে নদীর তলদেশ চট্টগ্রামের শহর অংশ পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারায় সংযুক্ত হয়েছে এই টানেল।
সরকারি সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার ও এক ঘণ্টা সময়ও কমিয়ে আনছে টানেলটি। আগামীকাল রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে সর্বসাধারণের যান চলাচলের জন্য টানেলটি খুলে দেওয়া হবে।
চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ এর মত দেশের বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামকে সংযুক্ত করলো 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল'।
পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে উদ্বোধনের পর আনোয়ারা প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর জনসমাবেশে অংশ নিতে ভোর ছয়টা থেকে ইতোমধ্যে লাখো মানুষের সমাগম হয়েছে।
৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার মূল টানেলের দৈর্ঘ্য হলেও সংযোগ সড়কসহ টানেলের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। নদীর দেড়শ ফুট তলদেশে এটি স্থাপিত।
প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশিদ জানান, লক্ষ্যমাত্রা আছে প্রতিদিন ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি চলাচলের। সেই অনুযায়ী বছরে ৭৬ লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারবে এ টানেল দিয়ে। এটির মেয়াদ কাল ১০০ বছর বলেও জানান তিনি।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, টানেল হয়ে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিতে ৬০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চললে মাত্র ৩ মিনিট সময় লাগবে।'
'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল' উদ্বোধন উপলক্ষে চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে উৎসবমুখর করতে সরকার বেসরকারি নানা উদ্যোগ নেয়া হয়।
প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ জানান, ১৬টি কাউন্টার আছে টানেলের টোল প্লাজার। ওজন স্ক্যাল আছে ৬টি। সরকারি বেসরকারি দায়িত্বশীলরা বলছেন, 'টানেল উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও মর্যাদার নতুন স্বর্ণদ্বারে প্রবেশ করলো।'
নদীর তলদেশ দিয়ে কম সময়ে দুটি আলাদা এলাকা যাতায়াত সুবিধা পাবে টানেলটির মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, এটি চালুর মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ সংযোগের সূত্রপাত হলো। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে টানেলটি সংযোগ স্থাপন করবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বেশীলরা।
'টানেলকে ঘিরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের আরও বিকাশ হবে' এবং জিডিপিতেও ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলটির নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত