দীর্ঘ সময় ধরে শিশুকে ফিডার খাওয়ানোর ফলে দন্ত ক্ষয়ের সম্ভাবনা, খাওয়ার পর এবং একটা দাঁত উঠলেই ব্রাশ করা, নিয়মিত জিহবা ও মাড়ি ব্রাশ করা, শিশুর দাঁত নিয়ে এমন জরুরি বিষয়গুলো ৫০ দশমিক ৬০ শতাংশ অভিভাবকই জানেন না। ফলে ৮০ শতাংশ শিশুর দাঁত অসময়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে। ‘শিশুদের দন্তক্ষয় নিয়ে তাদের পিতা-মাতার ধারণা ও প্রাত্যহিক জীবনে তার প্রয়োগ’ শীর্ষক গবেষণায় এ সব তথ্য উঠে আসে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিট এবং চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজের একদল চিকিৎসক। দুই কলেজের দন্ত বিভাগে আসা ৫-৬ বছর বয়সী ২৩৩ জন শিশু ও তাদের অভিভাবকের মধ্যে এ গবেষণ পরিচালিত হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পরিচালিত গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টার কলেজের ডেন্টাল পাবলিক হেলথ বিভাগের প্রধান ডা. তৌহিদা আহসান। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ডেন্টাল ইউনিটের লেকচারার ডা. মো. সেলিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আফরোজা হক, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জসীম উদ্দীন।
প্রধান গবেষক ডা. তৌহিদা আহসান বলেন, শিশুর দাঁত নিয়ে অভিভাবকরা অসচেতন। অনেকেই মনে করেন আড়াই বছর পর থেকে শিশুর দাঁত ব্রাশ করতে হয়। এটা ভুল। একটা দাঁত উঠার পর থেকেই ব্রাশ করতে হবে। তাছাড়া, জিহবা-মাড়িও নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে। অনেকে মনে করেন, সকালে ব্রাশ করলে হয়। কার্যত ব্রাশ করতে হবে রাতে খাওয়ার পর, সকালে নয়। বর্তমানে অভিভাবকরা নিয়মিত শিশুর দাঁত যত্ন না নেওয়ায় ক্ষয়সহ নানা সমস্যায় তৈরি হচ্ছে। পরে দেখা যায় দাঁতই নষ্ট হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, অভিভাবকরা শিশুর অন্যান্য বিষয় নিয়ে যেভাবে যত্নবান, দাঁত নিয়ে ততটাই উদাসীন। ফলে শিশুদের দাঁত ক্ষয়সহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এটি একটি জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মারাত্মক সমস্যা। শিশুর দাঁতের সুষ্ঠু গঠনের ক্ষেত্রে ক্ষয়রোগ খুব ক্ষতিকর। তাই শিশুদের দাঁতের বিষয়ে অভিভাবকদের সঠিক ধারণা ও সচেতন হওয়া জরুরি।
গবেষণায় বলা হয়, ৮৩ দশমিক ৩০ শতাংশ শিশু বিভিন্ন দন্তক্ষয় রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ৬ বছরের কম বয়সী ৭৫ শতাংশ শিশু নিজেরা ব্রাশ করে। ফলে তারা সঠিকভাবে মুখ ও দাঁত পরিস্কার করতে পারে না, যা দন্তক্ষয় বাড়ার একটি অন্যতম কারণ। প্রায় ৪৮ শতাংশ শিশু মা-বাবার তত্ত্বাবধানে থাকে না। যে সকল শিশু ব্রাশ করতে চায় না বা অনীহা প্রকাশ করে তাদের মধ্যে ৮০ ভাগ অবিভাবক তাদের শিশুদের মুখ ও দাঁত অনিয়মিতভাবে পরিস্কার করেন। ৭০ শতাংশ শিশু খাওয়ার আগে ব্রাশ করে। অথচ ব্রাশ করার সঠিক সময় হল খাওয়ার পর। প্রায় ৩০ শতাংশ শিশু মুখ ও দাঁত পরিস্কারের সময় প্রচন্ড অসহিষ্ণু আচরণ করে থাকে।
বিডি প্রতিদিন/এএম