কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ‘গুম, খুন ও মামলায় জড়ানোর’ প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকায় সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে জামালখান প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করলেও পুলিশি অবস্থানের কারণে চেরাগী পাহাড় এলাকায় বিক্ষোভ করেন তারা। কিন্তু আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় সমাবেশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। পুলিশ আন্দোলনকারীদের সাউন্ড গ্রেনেড-টিয়ারশেল ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আজ সোমবার নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী তারেক আজিজ বলেন, নগরের জামালখান ও চেরাগী মোড়সহ কোতোয়ালী থানা পুলিশ ২০ জনকে আটক করেছে। তাদের যাছাই বাছাই করা হচ্ছে, যদি সাধারণ শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। যদি দেখা যায়, তারা আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারী তাহলে তাদের গ্রেফতার দেখানো হবে। এ ঘটনায় আন্দোলনকারীদের ছোড়া ককটেলে আমাদের এসি কোতোয়ালী অতনু চক্রবর্তী, এসআই মোশারর হোসেনসহ চারজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা জামালখান প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন বিকাল ৩টায়। এর আগে থেকে জামালখান মোড়, প্রেসক্লাব, গণি বেকারী, চেরাগী পাহাড়সহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, বিজিবি, এপিবিএন সদস্যরা অবস্থান নেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্দেহজনক কাউকে দেখলে তার মোবাইল চেক করেন। এসময় জামালখান মোড় থেকে মোবাইল চেক করে আটজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইমন, বাকলিয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির আজমাঈন করিম নিহাল ও গাছবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের জুলহাজ হোসেন। আটক বাকি আন্দোলনকারীর নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। এরপর জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমনের নেতৃত্বে চেরাগী পাহাড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি নগরের জামালখাঁন ঘুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েক মিনিট অবস্থান করে পুনরায় চেরাগী পাহাড় চলে যায়। সেখানে রাস্তার পাশে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান করেন। তবে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে চেরাগী পাহাড় মোড়ে অবস্থান নেন শতাধিক আন্দোলনকারী। এসময় পুলিশ দুজনকে আটক করে প্রিজন ভ্যানে তুলতে চাইলে বিক্ষোভকারীরা বাধা দেন। তারা প্রিজন ভ্যানের সামনে সড়কের ওপর বসে পড়েন। এরপর বিক্ষোভকারীরা মোড়ের এক পাশে সড়কে বসে স্লোগান দিতে থাকেন। এভাবে ১৫ মিনিট বসে থাকার পর পুলিশ দুটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের পর বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর পুলিশ লাঠিপেটা করে সবাইকে সরিয়ে দেন। এসময় কোতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোশারফ চোখে আঘাত পান। এছাড়া একই সময় পুলিশের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার অতনু চক্রবর্তীসহ একাধিক সদস্য এবং কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। পরে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিলে নগরের রহমতগঞ্জ দিয়ে বের হয়ে যায়। আরেকটি গ্রুপ বিকাল ৫টার দিকে নগরের আন্দরকিল্লায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পরে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ