চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার পর থেকে প্রকাশ্যে নেই বিএনপির নেতারা। সহিংসতার পর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড় চলার কারণে নেতারা আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি। তবে বিএনপির নেতাদের পাশাপাশি প্রকাশ্যে দেখা মিলছে না অঙ্গসংগঠনের নেতাদেরও। গ্রেফতার আতঙ্ক ও মামলা থেকে বাঁচতে এক প্রকার ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে ‘পলাতক’ জীবন যাপন করছে নেতারা। এ পর্যন্ত জেলা ও নগর পুলিশ পুলিশ ৩৩টি মামলায় গ্রেফতার করেছে ৯৬৬ জনকে। বিএনপির দাবি, সিএমপির ২২টি মামলায় এ পর্যন্ত নগরীর ৩৯০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ও নগর পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় সিএমপিতে ২২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় গত ২৪ ঘন্টায় জেলা পুলিশ ১২ জন ও নগর পুলিশ ৩৪ জনকে গ্রেফতার করেছে।
জেলার ১১টি ও সিএমপির ২২টিসহ মোট ৩৩টি মামলায় মোট গ্রেফতার করা হয়েছে ৯৬৬ জনকে। যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী তারেক আজিজ বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৪ জনসহ মোট ২২টি মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৫৬৬ জনকে। ২২টি মামলার মধ্যে দুইটি হত্যা মামলা ও অন্যগুলো নাশকতা, বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন ধারায় দায়ের করা হয়েছে।
নগর বিএনপির মুখপাত্র মো. ইদ্রিস আলী বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপির কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না থাকার পরও পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত ১৬ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ২২টি মামলা হয়েছে সিএমপির বিভিন্ন থানায়। এসব মামলায় বিএনপির ৩৯০ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে সিনিয়র নেতারা গ্রেফতার এড়ানোর কৌশলগ্রহণ করেছে। যার কারণে মোবাইল বন্ধ রেখে অনান্য মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
জানা যায়, গত ১৫ দিন ধরে প্রকাশ্যে দেখা মিলছে না চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতাদের। এমনকি মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিএনপির সাম্প্রতিক সময়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আর্বিভাব হওয়া কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, উত্তর জেলার আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার, নগরীর আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, দক্ষিণ জেলার আহবায়ক আবু সুফিয়ানের দেখা মিলছে না। সর্বশেষ গত ১৯ জুলাই কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে নগর বিএনপি। কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী এতে অংশ নেন। এরপর থেকে এক প্রকার নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘পলাতক’ জীবন যাপন করছে বেশিরভাগই নেতা।
বিএনপি দলীয় সূত্র জানায়, আগে থেকেই মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীরা। সিনিয়র নেতাদের প্রায় সবার বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে। কারও কারও মামলার সংখ্যা শতাধিক। আদালতে হাজিরা দিতে দিতেই দিন কাটে। এ অবস্থায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতাকে ঘিরে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। যার কারণে নতুন করে বিপাকে ফেলে দিয়েছে বিএনপিকে। সদ্য গঠিত নগর বিএনপির কমিটি যখন কার্যক্রম শুরু করবে, ঠিক সে মুহুর্তে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে ধরপাকড় ও নতুন মামলা। যার কারণে এ মুহুর্তে মোবাইল ফোন খোলা রাখলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় লোকেশন ট্র্যাক করতে পারে। তাই গ্রেফতার এড়াতে সিনিয়র নেতারা মোবাইল ফোন বন্ধ রাখছে। কারণ এ মুহুর্তে সিনিয়র নেতারা গ্রেফতার হলে সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়তে পারে, যার কারণে আত্মগোপনে রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম