ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিঅইবি) ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, সুন্দরবনে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি জাতিসংঘেরও উদ্বেগ রয়েছে।
শনিবার ঢাকা রিপার্টার্স ইউনিটিতে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত ‘ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের সাম্প্রতিক সুন্দরবন পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। এতে মূল বক্তব্য রাখেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের পাশাপাশি খোদ বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘেরও উদ্বেগ রয়েছে। কারণ সুন্দরবনের মধ্যে একটি ‘রামসার সাইট’ ও আরেকটি ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ বা ‘বিশ্ব-ঐতিহ্য এলাকা’ রয়েছে। জাতিসংঘের রামসার সচিবালয় লিখিতভাবে অনেক আগেই সুন্দরবনের নিরাপত্তার প্রশ্নে তাদের পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ত্রুটিপূর্ণ ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন পরিবেশ সমীক্ষা প্রতিবেদন ব্যবহার, নির্মাণ ও নির্মাণোত্তর পর্যায়ে বনের মধ্যে বিভিন্ন মালামাল ও কয়লা পরিবহন, উপর্যুপরি নৌ-দুর্ঘটনা, বায়ু-পানি-মাটি-শব্দদূষণ থেকে বনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা প্রভৃতির প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব-ঐতিহ্য কেন্দ্র উদ্বেগ প্রকাশ করে। জবাবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের চিঠি দিয়ে আশ্বস্ত করা হয়, বনের ক্ষতিকর কিছু করা হচ্ছে না।’
ওই চিঠিতেও জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রশমিত হয়নি দাবি করে সুলতানা কামাল বলেন, এরপর ২০১৫ সালে ইউনেস্কোর ৩৯তম অধিবেশনে সুন্দরবনের বাস্তব পরিস্থিতি ও সরকারের কার্যক্রম অনুধাবনের জন্য বাংলাদেশে একটি ‘রিয়েকটিভ মিশন’ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তটি বাস্তবে সুন্দরবনের জন্য বাংলাদেশের কার্যক্রমের প্রতি যে ইউনেস্কোর অবিশ্বাস, অনাস্থা, সন্দেহ রয়েছে, তারই ইঙ্গিতবাহী। এই টিমের প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করেই সিদ্ধান্ত হতে পারে যে, বাংলাদেশের প্রভুত সম্পদশালী জাতীয় গৌরব সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকবে, নাকি বাদ পড়বে।’
সংবাদ সম্মেলনে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশবান্ধব নয়। এই প্রকল্পে যারা কনসালট্যান্ট হিসেবে আছেন, তারাই কেবল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পক্ষে কথা বলছেন, সমর্থন করছেন। তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পের পক্ষে একজনও স্বাধীন বিশেষজ্ঞ নেই। পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবনের পাশে কয়লাভিত্তিক রামপাল এবং ওরিয়ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হচ্ছে।’
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল মতিন ও কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/০২ এপ্রিল, ২০১৬/মাহবুব