‘আনসার রাজশাহী’ নামে নতুন এক জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। বাংলাদেশকে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করার মিশন নিয়ে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিল। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানের মুক্তমনা মানুষ ও হিন্দু ধর্মালম্বী চিকিৎসকদের হত্যার মিশন আছে তাদের। ‘আনসার রাজশাহী’র দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পর পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া দুজন হলেন: আমিনুল ইসলাম ওরফে রুমি (২৩) ও এনামুল হক ওরফে সবুজ (২২)। তাদের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর খামারপাড়া গ্রামে। রুমির বাবার নাম সাইফুল ইসলাম ওরফে টিপু। আর সবুজের বাবার নাম আবদুর রাজ্জাক। তারা দুজনই এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। রুমি বাগমারা ডিগ্রি কলেজ থেকে এবং সবুজ রাজশাহী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে।
সোমবার রাত আড়াইটার দিকে রুমিকে তার বাড়ি থেকে এবং রাত সাড়ে তিনটার দিকে সবুজকে বাগমারার রামগুইয়া গ্রামের একটি কলাবাগান থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল গ্রেফতার করে। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজশাহীর পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এসপি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, গোপন সূত্রে ডিবি পুলিশ জানতে পারে রাজশাহী জেলা সদর ও বাগমারার কিছু যুবক ‘আনসার রাজশাহী’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন তৈরি করেছে। সারাদেশের মুক্তমনা মানুষ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের চিকিৎসকদের হত্যার করে বাংলাদেশকে ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করার মিশন নিয়ে তারা কাজ করছে। এরই মধ্যে তারা বাগমারার হিন্দুপাড়া এলাকার নীরেন্দ্রনাথ সরকার (৫৮) নামে এক হোমিও চিকিৎসককে হত্যার পরিকল্পনা করেছে। এমন গোপন খবরের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেফতার করা হয়।
এসপি জানান, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে তারা প্রযুক্তির ব্যবহার করতো। এ জন্য তারা ফেসবুক ও ‘থ্রিমা’ নামে একটি সফটওয়্যাার ব্যবহার করতো। গ্রেফতারের পর তাদের দুজনের স্মার্টফোনেই থ্রিমা সফটওয়্যারটি ইনস্টল পাওয়া যায়। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে তারা তাদের সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতো। তাদের দুজনের মোবাইলে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে কথোপকথনের যে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা প্রিন্ট করে ৫৮ পৃষ্ঠা হয়েছে।
এসপি আরও জানান, রুমির মোবাইল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সম্প্রতি সে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে তার সংগঠনের অন্য সদস্যকে বলেছে, ‘ভাই, ওই ডাক্তার কে কী কোপ দিয়া দিব? আপনি কী খুব বিজি আছেন? আমি এখন ওই মালোয়ান ডাক্তারকে কোপ দিব, প্রবলেম হলো- থানা কাছাকাছি। আমার সাথে কাজ করার জন্য একজন দরকার।’ আরেক বার্তায় সে বলেছে, ‘ওই হিন্দু ডাক্তার বলে, মুসলমান কেন হবো? খৃস্টান হলে বাড়ি দিবে, গাড়ি দিবে। আর যে দিন মুসলমান হবো, তারপর দিন থেকে ভিক্ষা করতে হবে।’ গুলশানের হোটেলে কমান্ডো অভিযানে জঙ্গিরা নিহত হওয়ার পর সে বার্তা পাঠিয়েছে, ‘ভাই, বাসায় থেকে আমার খুব আফসোস হচ্ছে। সবাই এরা শহীদ হয়ে যাচ্ছে, আর আমি পিছনে পড়ে গেলাম। আমার জন্য দোয়া করেন। যত হিন্দু ডাক্তার তাদের সবাইকে মারার হুমকি দিসি।’
সবুজের মোবাইল সেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সেও সাম্প্রতিক সময়ে থ্রিমা সফটওয়্যার ব্যবহার করে বার্তা পাঠিয়েছে। একটি বার্তায় সে লিখেছে, ‘ওই যে কাজ করতে চাচ্ছে তার টাকা আমি নিজে দিতে চেয়েছি। যে দুই হাজার টাকা রাখতে বললাম, সেখান থেকে ৫০০ টাকা রুমিকে যেয়ে দিবেন। আমি ভালো আছি...। টাকাটা দরকার।’
এসপি বলেন, গ্রেফতার দুইজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তাদের সব পরিকল্পনার মাস্টারমাইন্ড আবু ইব্রাহীম ওরফে তারেক ওরফে রিপন। তার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায়। তবে তার সম্পর্কে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আনসার রাজশাহীর আরও তিন সদস্যর নাম জানা গেছে। তারা হলেন: বাগমারার খামারপাড়া গ্রামের আবদুল হাকিম মাস্টারের ছেলে শরিফুল ইসলাম ওরফে খালিদ ওরফে রাহাত ওরফে তালহা (২৪), পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পাড়ভাঙ্গুড়া গ্রামের রবিউল করিমের ছেলে রওশন আলী ওরফে আকাশ (২৪) এবং বুলবুল ওরফে আলামিন ওরফে বিল্লাল (২৬)। এই বিল্লালের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
এসপি জানান, রুমি ও সবুজকে গ্রেফতারের ঘটনায় বাগমারা থানায় তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় আনসার রাজশাহীর সদস্য হিসেবে শনাক্ত হওয়া মোট ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। আর গ্রেফতার রুমি ও সবুজকে মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা তাদের সব অপরাধ ও পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন এসপি মোয়াজ্জেম হোসেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৬ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ