ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি পারাবত-১০ লঞ্চের কেবিনে গৃহবধূ মিনা আক্তারকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহতের বড় ভাই নাসিরউদ্দিন বাদী হয়ে ঘাতক স্বামী আনিছুর রহমান, তার চাচাতো ভাই কালাম ও তাদের বন্ধু তুষারকে অভিযুক্ত করে গতকাল মঙ্গলবার রাতে এই হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আসামিদের মধ্যে আনিছ ও কালামের বাড়ি শরীয়তপুরের গোশাইর হাটে এবং তুষারের বাড়ি নওগাঁয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক আনিছ, কালাম ও তুষার এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালী মডেল থানার এসআই আবু তাহের। তাদের ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল বুধবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজি হয়েছনি বলে এসআই তাহের জানান।
তিনি আরও জানান, নিহত মিনার বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়। তিনি সাভারে ভাড়ায় বসবাস করে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কাজ করতেন। তার সাথে মুঠোফোনে পরিচয় হয় সাভারের একটি জুতার দোকানের কর্মচারী আনিছের। এর সূত্র ধরে গত ঈদুল ফিতরের পর তারা বিয়ে করে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে মোহ ভঙ্গ হয় আনিছের। তাই মিনাকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে আনিছ। পরে চাচাতো ভাই কালামের পরামর্শে কুয়াকাটা বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে গত সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশালগামী এমভি পারাবত-১০ লঞ্চের তৃতীয় তলার একটি স্টাফ কেবিন ভাড়া নেয় আনিছ ও তার স্ত্রী মিনা। স্ত্রীকে হত্যার জন্য চুক্তিকৃত ২০ হাজার টাকার ১০ হাজার টাকা অগ্রিমও দেয় আনিছ। বাকি টাকা কাজের পরে দেয়ার কথা ছিল। ওইদিন রাত দেড়টার দিকে মিনা ঘুমিয়ে পড়লে আনিছ কক্ষ থেকে বের হয়ে কালাম ও তুষারকে কেবিনে ঢুকিয়ে দেয়। তারা দুইজন মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত একটি ছুরি দিয়ে ঘুমন্ত মিনার গলায় উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে। এ সময় তার ধস্তাধস্তি ও গোঙানির শব্দ পেয়ে পাশের লোকজন টের পেয়ে ওই কেবিনে ঢুকতে গেলে তাদেরও ছুরি নিয়ে কোপাতে তেড়ে যায় তারা। এক পর্যায়ে লঞ্চের কর্মচারি এবং যাত্রীরা বাইরে থেকে ওই কেবিনের কক্ষের দরজা আটকে দেয়। অপরদিকে লঞ্চের ছাদ থেকে নিহতের স্বামী আনিছকে আটক করে তারা।
মঙ্গলবার ভোরে লঞ্চটি বরিশাল নদী বন্দরে পৌঁছলে আটক ৩ জনকে হেফাজতে নেয় কোতয়ালী পুলিশ। তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটিও জব্দ করে। একই সাথে পুলিশ মিনার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে আজ বুধবার মিনার লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে এসআই তাহের জানিয়েছেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৭ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ