অবৈধভাবে লিবিয়া পাচারের সঙ্গে জড়িত দেশের বিভিন্ন এলাকার ৩০ মানবপাচারকারীর নাম-ঠিকানা পেয়েছে র্যাব। একই সঙ্গে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত সিলেটের দুটি ট্রাভেল এজেন্সির নামও পাওয়া গেছে। জরুরি ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানোর জন্য র্যাবের সকল জোনে তালিকা পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন এ সব তথ্য জানান।
এর আগে গত বুধবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে র্যাব ভূয়া ভিসায় অবৈধভাবে লিবিয়াগামী ৩৯ জনকে উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া ৩৯ জনের অধিকাংশই সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার। কয়েকজন মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আছেন। ৩৯ জনের মধ্যে প্রায় সবার বয়স ৩০ এর নীচে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন বলেন, লিবিয়া পাচারকালে উদ্ধার হওয়া ৩৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ৩০ জন দালালের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাছাড়া সিলেটের আল মামুন ট্রাভেলসের মালিক মো. মামুন এবং শামীম ট্যুর এন্ড ট্রাভেলসের মালিক আদনান আনসারীও এই পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। মানবপাচারকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের কোন ট্রাভেল এজেন্সি কিংবা দালাল এই কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে কিনা সেটা আমরা তদন্ত করে দেখছি।
লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন বলেন, সিলেটের যারা বাসিন্দা তাদের অধিকাংশকে লিবিয়া হয়ে ইতালি নিয়ে যাবার কথা বলা হয়েছিল। বাকিদের লিবিয়া নিয়ে যাওয়ার জন্য জড়ো করা হয়েছিল। ৩৯ জনের মধ্যে ১৯ জন ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তজাতিক বিমানবন্দর ত্যাগের অনুমতি পেয়েছিলেন। কিন্তু গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভূয়া ভিসার বিষয়টি জানতে পেরে তাদের বিমানে উঠার আগে আটকাতে সক্ষম হন র্যাব কর্মকর্তারা। ২০ জনকে বিমাবন্দরে প্রবেশের আগে আটকানো হয়। তবে ২১ জন ভূয়া ভিসা নিয়ে লিবিয়া চলে যেতে সক্ষম হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের চট্টগ্রাম থেকে দুবাই হয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুল অথবা আঙ্কারায় নিয়ে যাওয়া হত। তারপর সেখান থেকে লিবিয়ার ত্রিপোলিতে নিয়ে যাওয়া হত। লিবিয়া বিমানবন্দর থেকে দালাল সাদিক ও মোজাম্মেল তাদের নিজের জিম্মায় নিয়ে যেত। এরপর চলত টাকা আদায়ের জন্য নির্যাতন।’
মিফতাহ আরও বলেন, লিবিয়া যাওয়ার জন্য ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার জন্য সাড়ে ৪ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। তবে ৩৯ জনের মধ্যে শুধু একজন এক লাখ টাকা, আরেকজন ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়। বাকিদের লিবিয়া পৌঁছানোর পর টাকা দেওয়ার কথা ছিল।
তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে ৮-১০ জন করে মাইক্রোবাসে করে এনে ঢাকার ফকিরাপুলে বিভিন্ন হোটেলে রাখা হয়েছিল। এরপর বাসে করে তাদের চট্টগ্রাম নগরীতে এনে অলংকার মোড়ে হোটেলে রাখা হয়। অপরিচিত কয়েকজন লোক এসে তাদের পাসপোর্ট-ভিসা দিয়ে যায়। রাতেই তাদের বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। দুবাইগামী এয়ার এরাবিয়ার দুটি বিমানে করে বুধবার রাতে ৭০ জন করে ১৪০ জনের চট্টগ্রাম ত্যাগের কথা ছিল। কিন্তু অভিযানের খবর পেয়ে সবাই বিমানবন্দরে আসেনি।
অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা দেয়া সিলেটের কুলাউড়ার হাশিম বলেন, স্থানীয় দালাল ওহাবের সঙ্গে ইতালি যাবার জন্য সাড়ে ৪ লাখ টাকা চূড়ান্ত করি। কিন্তু কয়েকদিন আগে হাশিম এসে বলে, সরাসরি ইতালি যাওয়া যাবে না। লিবিয়া হয়ে যেতে হবে। এজন্য চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে যেতে হবে। ওহাবের ভাইও একইভাবে ইতালি গেছে জানতে পেরে হাশিম এই পথ বেছে নেয় বলে জানান।
বিডি-প্রতিদিন/১৩ অক্টোবর ২০১৬/ সালাহ উদ্দীন