রাজধানীর বাড্ডায় গারো তরুণী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি রাফসান হোসেন রুবেলকে দ্বিতীয় দফা গ্রেফতারের পর ৬ দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমাতি দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
এরআগে ১৩ নভেম্বর দুপুরে আদালত এলাকায় পুলিশের হেফাজত থেকে কৌশলে পালিয়ে যাওয়া আসামি রুবেলকে বাড্ডা এলাকা ফের গ্রেফতার করা হয়। পরে আজ বাড্ডা থানার এসআই বি এম মামুন আসামিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন।
এসময় আসামি রুবেলের কোন আইনজীবী ছিলেন না। পরে আসামি রুবেলের কাছে বিচারক জানতে চান, তাঁর কোনো আইনজীবী আছেন কি না? তিনি ‘না’ সূচক জবাব দিয়ে নিজেই শুনানি করেন। আদালতকে আসামি রুবেল বলেন, স্যার, মারধরের ভয়ে আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম। আমারে রিমান্ড দিয়েন না। আমি সব সত্য কথা বলে দিমু। আজ আমি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসছিলাম। ভিন্ন কারণে আত্মসমর্পণ করতে পারি নাই। আমি আর ভুল করমু না। আমি ভুল বুঝতে পারছি। শুনানি শেষে আসামি রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এসময় আদালতে উপস্থিত বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আসামি রুবেল পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে খোঁজা হচ্ছিল। হাতকড়া পরা অবস্থায় তিনি পালিয়েছিলেন। হাতকড়া ঢাকার জন্য তিনি এমন অবস্থা করেন যেন দেখে মনে হয়, তাঁর হাত ভেঙে গেছে। পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে এই আসামি নিজের কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি। তবে তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে তিনি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। সেই সূত্র ধরে বাড্ডা এলাকা থেকে তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
এ মামলায় ১১ নভেম্বর আসামি রুবেলকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১)। পরদিন তাঁকে বাড্ডা থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইমরানুল হাসানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ১৩ নভেম্বর তাঁকে আদালতে নিয়ে গেলে সেখান থেকে পালিয়ে যায় আসামি রুবেল। ঘটনার পর ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আসামি রুবেল ধর্ষণের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছিলেন। এ কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য তাঁকে আদালতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি পালিয়ে যান। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য এসআই এমরানুল হাসান ও কনস্টেবল দীপককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আসামি রুবেল উত্তর বাড্ডার মিশ্রীটোলা এলাকার মফিজ উদ্দিন ওরফে মফু মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতির প্রস্তুতি, মাদকদ্রব্য, অস্ত্র আইন ও সন্ত্রাসী ঘটনায় বাড্ডা এবং রামপুরা থানায় ১২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় তিনি সাজপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২৫ অক্টোবর বাড্ডার ৩ নম্বর লেনের হাসান উদ্দীন সড়কের একটি বাসায় ওই গারো তরুণীকে আল আমিন, সালাউদ্দিন সালুসহ কয়েকজনের সহায়তায় ধর্ষণ করেন আসামি রুবেল। এ ঘটনায় ২৮ অক্টোবর ওই তরুণী বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় মামলা করেন। পরে বিমানবন্দর এলাকা থেকে আসামি রুবেলকে গ্রেফতারের করে র্যাব। এরআগে ২৫ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ওই গারো তরুণী তার হবু স্বামী রিপন ম্রংয়ের সঙ্গে দেখা করতে বাড্ডার হাসান উদ্দীন সড়কে হাজী রুহুল আমিনের মেসে গিয়েছিলেন। ওইদিন মেসের ম্যানেজার হানিফ মেসে অবস্থানরত অন্য ভাড়াটিয়া নাজমুল, সালাউদ্দীন সালু, জয়নাল, আল আমিন ও রনির উপস্থিতিতে রিপন ম্রংকে বলেন, মেসে মহিলা আনা নিষেধ, তুমি কেন এখানে মহিলা নিয়ে আসছ। এজন্য তিনি রিপন ম্রংকে ১ নভেম্বরের মধ্যে মেস ছাড়ার নির্দেশ দেন। একই সময়ে মেসের বাসিন্দা সালাউদ্দিন সালু ফোনে রুবেলকে মেসে ডেকে আনেন। তার সঙ্গে আসে সন্ত্রাসী আল আমিন, রনি, সুমন ও নাজমুল। তারা রিপন ম্রংয়ের কাছে মহিলা আসার কথিত অপরাধের দফারফা করার অজুহাতে ম্রংয়ের কাছে থাকা ১৭ হাজার টাকা এবং তার ব্যবহৃত স্মার্টফোনটি ছিনিয়ে নেন। কিছু সময় পর রুবেল ও তার সহযোগীরা ওই তরুণীকে পাশের পারভেজের রিকশার গ্যারেজের পাশে হাজী মোশারফ মিয়ার পরিত্যক্ত বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৫ নভেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ