বৃষ্টি জনজীবনে স্বস্তি এনে দেয়। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সেই জনজীবন দুর্বিষহ উঠেছে নগরবাসীর। বর্তমানে অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, গরমে হাঁফিয়ে উঠলেও বৃষ্টির জন্য কেউ হয়তো অন্তত বৃষ্টির প্রার্থনা করবেন না। বিশেষ করে, সকালে অফিসগামী রাজধানীবাসী এমনটাই ভাবছেন। আর তা না হলে তারা বৃষ্টির দিন অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দেবেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত বুধবার বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলবদ্ধতায় আটকা পড়া অফিসগামী মানুষের আক্ষেপের সুর এটা। একই সঙ্গে তারা এটাও বলছেন, এতো নিউজ হয়, এতো আলোচনা-সমালোচনা হয় তারপরও জলবদ্ধতা নিরসনে কর্তৃপক্ষের কোনো সুনজর দেখি না।
এমনিতেই একটু ভারি বৃষ্টিপাত হলেই তলিয়ে যায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। রবিবার থেকে শুরু হওয়া এই বৃষ্টিতে এ ঘটনার ব্যতিক্রম হয়নি। গত তিন/চার দিন ধরে রাজধানী থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আর এর ফলে চলতি সপ্তাহে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দিনমজুর, অফিসগামী কর্মজীবী, স্কুলগামী শিক্ষার্থী, খেটে খাওয়া লোকজনসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। বৃষ্টির কারণে কর্মস্থলে বা কোনো জরুরী প্রয়োজনে বাইরে যেতেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। আজ বুধবারও বৃষ্টির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে রাজধানীর অনেক এলাকা।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, অপেক্ষাকৃত নিচু স্থানগুলোতে হাটুপরিমাণ পানি জমে গেছে। সেই পানিতে ভাসছে নোংরা-আবর্জনা। বিশেষ করে নগরীর শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, আরামবাগ, বাড্ডা, রামপুরা, মিরপুর ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ বেশ কিছু স্থানে পানি জমে জলজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে যানবাহনে ভোগান্তি বেড়েছে।
এছাড়া নগরীর অধিকাংশ সড়কের পাশে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন ও ওয়াসার পানির সংযোগ লাইনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কাজ চলমান থাকায় খোঁড়া গর্তে পানি জমে সড়কের সঙ্গে সমান হয়ে গেছে। এসব গর্তে পড়ে দুর্ঘটনায় পড়ছেন যাতায়াতকারীরা।
মামুন নামে এক যাত্রী সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রাবাড়ী থেকে বাড্ডার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মালিবাগে মোড়ে আটকাপড়া অবস্থায় তিনি জানান, সিএনজিযোগে এসেও দেড় ঘণ্টায় কেবল মালিবাগে এসেছে পৌছলাম। আরও আড়াই ঘণ্টার মধ্যে অফিসে পৌঁছতে পারব কিনা সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
আরও ভয়াবহ অবস্থা যারা পাবলিক বাসে করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। নাজমুল হাসান নামের পাবলিক বাসের এক যাত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ''আপনারা (সাংবাদিকরা) তো অনেক নিউজ করেন, মানুষ সমালোচনা করে, তারপরও এই জলাবদ্ধতা দূর হয় না। সবশেষে তিনি বলেন, একটু দেখবো তারপর বাসায় ফিরে যাব।''
তবে, মানুষ বা নাজমুল নয়। জলাবদ্ধতা সৃষ্ট হওয়া এলাকা মাড়িয়ে যাদের অফিস যেতে হয় এমন সকলের ভাষ্য প্রায় একই রকম। রাজধানীতে যারা অফিসের উদ্দেশ্যে সকালে বাসা থেকে বের হন, অফিসে পৌঁছে তাদের কতটা বেগ পেতে হয় সেটা তারাই ভালো জানেন। অনেকেই তো সময় মতো অফিসে পৌঁছতে না পেরে বসের কথা তো রয়েছে পাশাপাশি জরিমানা দিয়ে মাশুল দেন বলেও জানিয়েছেন। কিন্তু দেখা যায় প্রত্যকেই হাতে সময় রেখে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু জলাবদ্ধতা নামক 'ব্যাধি' তাদের সেই পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। আবার ফিরতি পথে একই সমস্যার মুখোমুখি হয়ে সন্ধ্যার আগে যাদের বাসায় ফেরার কথা ছিল তারাই ৯টা কিংবা ১০টায় বাসায় পৌছন। তাই তো অফিসগামী মানুষ এই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যথায় বৃষ্টির দিন অফিস ছুটির রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিডি-প্রতিদিন/০৫ জুলাই, ২০১৭/মাহবুব