চট্টগ্রাম নগরের বিদ্যমান খালগুলো আরএস জরিপ অনুযায়ী সংস্কার, বিলুপ্ত খালের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নতুন খাল খনন ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসন অসম্ভব। তাছাড়া কেবল পাম্প হাউস ও স্লুইসগেট নির্মাণ করলেও জলাবদ্ধতা কমবে না। আগে খালের পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো, সিলট্রেপ (বালির ফাঁদ) ও জলাধার নির্মাণ করতে হবে। অন্যথায় প্রকল্পের সব টাকা জলে যাবে।
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও উন্নয়ন অগ্রাধিকার প্রকল্প নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ফোরামের সভাপতি ড. মুহাম্মদ সিকান্দার খান, প্রকৌশলী এবিএমএ বাসেত, স্থপতি বিধান বড়ুয়া, অধ্যাপক শফিক হায়দার চৌধুরী, চিটাগাং সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের সদস্যসচিব ড. শামসুল হোসাইন প্রমুখ।
সম্প্রতি সিডিএর কালুরঘাট থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত কর্ণফুলীর পাড়ে বেড়িবাঁধ ও খালের মুখে স্লুইসগেট নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন প্রেক্ষিতে ফোরামের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়।
ফোরামের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে অগ্রাধিকার চিহ্নিত করার তাগিদ দেওয়া হয়। এর মধ্যে আছে- জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি নিষ্কাশন, যানজট নিরসন, কর্ণফুলী ক্যাপিটাল ড্রেজিং, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, পণ্য সরবরাহ ও মানুষের যাতায়াতে নগরের অভ্যন্তর ও জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চট্টগ্রাম ক্রমশই চরম দুর্ভোগ এবং অকার্যকর নগরে পরিণত হচ্ছে। কয়েক দশক থেকে নগর অকার্যকরের কফিনে একটা একটা পেরেক মারা হচ্ছে। এর কারণ নগর উন্নয়নে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তারা নগরের প্রকৃত সমস্যা ও সমস্যার কারণ চিহ্নিত করতে অক্ষম। বর্তমানে যানজট কমানোর নামে যে উন্নয়ন হচ্ছে তা ‘লংটার্ম ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজি ফর ট্রাফিক অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন মাস্টারপ্ল্যানে’ প্রস্তাবিত সুপারিশের বিপরীত। যা বিজ্ঞানসম্মতও নয়।
ড. সিকান্দার খান বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে বলে আসছি, অপরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে। পরিকল্পনা অগ্রাহ্য করে উন্নয়ন হচ্ছে। মাঠ তৈরি না করে হাজার হাজার কোটি টাকা ছিটানো হচ্ছে। এর প্রধান কারণ সুশাসনের অভাব। এখানে কর্তার ইচ্ছাতেই কর্ম হচ্ছে। আমরা চাই জনগণকে পরিকল্পনার বিষয়টি জানানো হোক। তারপর উন্নয়ন হোক। এখন যেভাবে উন্নয়নের নামে টাকায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, অপরিকল্পিত হওয়ায় ওই টাকা জলে যাবে। পরিকল্পনা অগ্রাহ্য করে কাজ করতে দেওয়া হবে না- এটিই হওয়া উচিত নগরবাসীর স্লোগান।
তিনি বলেন, ৫০ বছর পরে যে জিনিস কাজে আসবে তা না করে এখন যেটি প্রয়োজন সেটি করা উচিত। বর্তমান বিসর্জন দিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ার অর্থ নেই। দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখানোর জন্যই বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বাহবা কুড়ানোর জন্য, প্রিয়পাত্র হওয়ার জন্য এসব প্রকল্প। জনগণের কল্যাণে নয়। বাস্তবিক অর্থে যানজট নিরসনে বহুতল ভবনের নিচতলা খালি রাখা, আবাসিকে বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ করা, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ বন্ধ করা, ফুটপাতে পথচারীদের নির্বিঘ্নে হাঁটার সুযোগ নিশ্চিতে কারো উদ্যোগে নেই।
বিডি প্রতিদিন/১৮ জুলাই ২০১৭/হিমেল