বরিশালে একটি বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় নাখোশ হয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। নির্বাচনী পরীক্ষায় পাশ না করা শিক্ষার্থীদের অনৈতিক সুবিধা নিয়ে প্রত্যয়নপত্র দেয়ায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলা প্রশাসক, সদর ইউএনও এবং জেলা ও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ভৎর্সনা করেন দুদক চেয়ারম্যান। এ সময় সেখানে উপস্থিত বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের কর্মকর্তা উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হতচকিত হয়ে যান। দুদক চেয়ারম্যানের বকাবকির সময় সেখানে পিনপতন নিরবতা নেমে আসে।
মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে ‘দুর্নীতিমুক্ত সরকারি সেবা’, দুর্নীতির অভিযোগের প্রকৃতি বিষয়ক মাঠ পর্যায়ের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা সভার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম শেষে দুদক চেয়ারম্যান সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নের হোগলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তিনি উপস্থিত শিক্ষকদের কাছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় হোগলা স্কুলের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা জানতে চান।
সেখানে উপস্থিত মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, দুদক চেয়ারম্যানের প্রশ্নের জবাবে ওই স্কুলের একজন শিক্ষক এবার এসএসসি’তে ১০৪জন পরীক্ষার্থী ছিলো বলে জানায়। এ সময় দুদক চেয়ারম্যান ফের প্রশ্ন করে বলেন, আমি জানি ১০৪ জনের মধ্যে অর্ধেকের বেশীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে প্রত্যয়ন পত্র দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী করা হয়েছে। তখন নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করার পরও অনেককে প্রত্যয়নপত্র দিয়ে পরীক্ষার্থী করার কথা স্বীকার করেন ওই স্কুলের শিক্ষকরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, ফেল করা শিক্ষার্থীদের প্রত্যয়নপত্র দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী করার কথা শুনে প্রচন্ড রেগে গিয়ে পাশেই থাকা জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'সারা দিন ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকলে হবে, তুমি কাজটা করো কি, শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি যদি খেয়াল-ই না দাও, তাহলে নতুন প্রজন্ম কি শিখবে। তুমি এগুলো দেখ না কেন, এগুলোতো তোমার কাজ। তোমার ইউএনও কোথায়।' অদূরে থাকা সদর ইউএনও হুমায়ুন কবির হম্বিতম্বি হয়ে দুদক চেয়ারম্যানের সামনে গেলে, তার কাছেও ফেল করা শিক্ষার্থীদের পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে কৈফিয়ত চান দুদক চেয়ারম্যান। এসময় তাকেও নানা কথা শোনান এবং উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতিকে শোকজ করতে বলেন।
এ সময় পাশে থাকা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিথিকা সরকার এবং স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দিদারুল আলম শাহিন সহ শিক্ষকদের ভৎর্সনা করেন। তিনি বলেন, আমার অন্যায় হয়েছে, তোমাদের পুলিশে সোপর্দ না করা।
সেখান থেকে বের হওয়ার আগে দুদক চেয়ারম্যান স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বলেন, একটি বিষয়ে ফেল করলে সেই শিক্ষার্থী পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারবে না। এ বিষয়টি খেয়াল রেখে স্কুলের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী হওয়ার জন্য শিক্ষকদের দিক নির্দেশনা দেন তিনি। আগামীতে হোগলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফলাফল পর্যবেক্ষনেরও হুশিয়ারী দেন তিনি।
হোগলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দিদারুল আলম শাহিন জানান, সদর উপজেলার গ্রামে স্কুল হওয়ায় ভালো শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। তারপরও যা পাওয়া যায় তারা লেখাপড়ায় তেমন ভালো নয়। এরপরও শিক্ষকরা চেষ্টা চালান শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে গড়ে তোলার জন্য। সভাপতি শাহিনও দুদক চেয়ারম্যানের ক্ষুব্ধ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ওই ঘটনা ছাড়া বিদ্যালয়ের সবদিকের প্রশংসা করেছেন দুদক চেয়ারম্যান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিথিকা সরকার জানান, দুদক চেয়ারম্যান যাওয়ার কারণে হোগলা স্কুলে বহু মানুষের ভিড় জমে যায়। দুদক চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্য নিয়ে ক্ষুব্ধ হন, তখন তিনি (বিথিকা) দূরে ছিলেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো সাইফুজ্জামান বলেন, ফেল করা শিক্ষার্থীদের পদোন্নতি দেওয়া হলে তারা সম্পদ না হয়ে দেশের বোঝা হয়ে দাড়াবে। ফেল করা শিক্ষার্থীদের পদোন্নতি দেয়ায় দুদক চেয়ারম্যান তাদের উপর ক্ষুব্ধ হননি, তাদের (কর্মকর্তা) অনুশাসন করেছে বলে দাবি জেলা প্রশাসকের।
বিডি প্রতিদিন/১৮ জুলাই ২০১৭/হিমেল