বরিশালে ভুল প্রশ্ন পত্রে এসএসসি’র প্রথম পত্র পরীক্ষা নেয়ার ঘটনায় নগরীর হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের হল সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ৪ জন শিক্ষককে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার এই পদক্ষেপ নেয় জেলা প্রশাসন। একই সাথে ওই ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন এবং শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ ৩ সদস্যের পৃথক দু'টি তদন্ত কমিটি করেছে। কমিটিকে পরবর্তী ৫ ও ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্তকৃত হর সুপার হলেন হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগম এবং পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্তরা হলেন ওই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাসুদা বেগম ও মো. সাইদুজ্জামান এবং সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শাহানাজ পারভীন শিমু ও শেখ জেবুন্নেছা।
তাদের মধ্যে শেখ জেবন্নেছা ও মাসুদা বেগম এমপিওভুক্ত এবং শাহনাজা পারভীন শিমু ও মো. সাইদুজ্জামান খণ্ডকালীন শিক্ষক বলে স্কুল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, ভুল প্রশ্ন পত্রে পরীক্ষা গ্রহণের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন এবং শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ পৃথক দু'টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রশান্ত কুমার দাসকে প্রধান করে জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন এবং সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জোবায়দা নাসরিন। কমিটিকে পরবর্তী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রশান্ত কুমার দাস।
অপরদিকে, শিক্ষা বোর্ড গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান হয়েছেন বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর আব্বাস উদ্দিন এবং দুই সদস্য হলেন বোর্ডের উপ-সচিব আব্দুর রহমান ও সেকশন কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। এই কমিটিকে পরবর্তী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, এসএসসি পরীক্ষা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্পর্শকাতর পরীক্ষা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট হল সুপার এবং ওই কক্ষের ৪ পরিদর্শক দায়িত্বে অবহেলা, গাফেলতি এবং খামখেয়ালী করেছে। এ কারণে তাৎক্ষণিক হল সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত এবং অপর ৪ কক্ষ পরিদর্শক শিক্ষককে চলতি এসএসসি পরীক্ষার সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সাথে তাদের সকলকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। আগামীতে এই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়া কোনো পরীক্ষার্থী যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে বোর্ড চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত সোমবার এসএসসি’র প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দুটি কক্ষে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ২০১৮ সালের সিলেবাস অনুযায়ী কেজুয়াল পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন পত্রে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষা শেষে বিষয়টি ধরা পড়লে শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ভুলের বিষয়টি স্বীকার করে ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়া কোনো শিক্ষার্থী যাতে তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সেই প্রতিশ্রুতি দেন। ওই কেন্দ্রে নগরীর জগদিস সারস্বত গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ এবং অক্সফোর্ড মিশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।
এর মধ্যে জগদিস সারস্বতের ৪৮ শিক্ষার্থী ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান। তবে অক্সফোর্ড মিশন স্কুলের কতজন শিক্ষার্থী ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছেন তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, হালিমা খাতুন কেন্দ্রে কেজুয়াল পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রশ্নপত্রের ৪টি প্যাকেট পাঠানো হয়েছিল। কেন্দ্রে ২টি প্যাকেট খোলা হয়েছে, বাকি ২টি প্যাকেট ইনটেক রয়েছে। সে হিসেবে ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়া পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা কোনো ভাবেই ৪০ জনের বেশি হবে না বলে নিশ্চিত করে বলেন বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন