বরিশালে আধুনিক বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে নেই মুমূর্ষু রোগীর জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ আইসিইউ’র ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য বিভাগের জোনিং তালিকায় বরিশালকে রেড জোন হিসেবে দেখানো হলেও এখন পর্যন্ত বরিশালের বেসরকারি কোনো হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি। যথাশীঘ্রই বেসরকারি হাসপাতালগুলো আইসিইউ কিংবা করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করবে এমন কোনো লক্ষণও নেই।
ফলে আইসিইউ কিংবা করোনা পরীক্ষার জন্য শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালই বরিশালের সাধারণ রোগীদের ভরসা। তবে শের-ই বাংলা মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে মাত্র ১৮টি এবং সাধারণ রোগীদের জন্য ১০টি আইসিইউ বেড থাকলেও এগুলো পরিচালনার জন্য নেই কোনো স্থায়ী জনবল। অন্য বিভাগ থেকে ধার করা চিকিৎসক দিয়ে কোনো মতে চালু রাখা হয়েছে আইসিইউ সেবা।
প্রথম দিকে মেডিকেলের কলেজের পিসিআর ল্যাবে মেডিকেলে ভর্তি রোগী ছাড়া অনেকের করোনা পরীক্ষা হলেও এখন মেডিকেলে ভর্তি রোগী ছাড়া কারোর নমুনা নিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে বিপুল জনগোষ্ঠী থেকে যাচ্ছে করোনা পরীক্ষার বাইরে।
বরিশালে ব্যাঙের ছাতার মতো অনেক ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে উঠলেও আধুনিকতায় সাউথ এ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতাল, আরিফ মেমেরিয়াল হাসপাতাল, রাহাত আনোয়ার হাসপাতাল, রয়েল সিটি হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ফেয়ার ক্লিনিক, ইডেন ক্লিনিক, আবদুল্লাহ হার্ট ফাউন্ডেশন, বেলভিউ হাসপাতাল এবং সেন্ট্রাল হাসপাতাল উল্লেখযোগ্য। তবে এর কোনোটিতে নেই মুমূর্ষু রোগীর জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ আইসিইউ’র ব্যবস্থা। এমনকি বর্তমান মহামারী অবস্থায় থাকা করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাও নেই কোনো বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে।
মহসিন বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো শুধু সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আয়ের পথ খুঁজছে। তারা সাধারণ রোগীদের নিয়ে ভাবে না।
সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশালের সভাপতি অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা বলেন, বিশ্ব এই রকম অবস্থার মুখোমুখি এর আগে হয়নি। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলো ব্যবসার চিন্তা করে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হাসপাতাল নির্মাণের সময় তাদের আইসিইউ’র ব্যবস্থা রাখা উচিত। যাদের আইসিইউ’র ব্যবস্থা নেই তারা বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় দ্রুত আইসিইউ’র ব্যবস্থা করবে আশা করেন তিনি। বরিশালের অন্যতম আধুনিক রাহাত আনোয়ার হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. মো. আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন আইসিইউ’র অভাবে। এটা সংশ্লিষ্টদের মনে রাখা উচিত। সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর দুরাবস্থার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অদূরদর্শিতা এবং অবহেলা দায়ী বলে মনে করেন বিএম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা।
বরিশাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহমুদ বলেন, এই ধরনের মহামারীর সন্মুখিন এর আগে কেউ কখনও হয়নি। একটি আইসিইউ ওয়ার্ড নির্মাণ করতে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু রোগীরা সব সময় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকামুখি হয়। এ কারণে অনেক অর্থ বিনিয়োগ করে আইসিইউ নির্মাণ করলে ঝুঁকি থেকে যায়। তাছাড়া একটি আইসিইউ ওয়ার্ড নির্মাণ করতে অক্সিজেনসহ আধুনিক সুবিধা থাকতে হয়। যা বরিশালের কোনো বেসরকারি হাসপাতালে নেই। সরকারি সুস্পস্ট নির্দেশনা এবং কিট সরবরাহ ছাড়া কোনো বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে জানান কাজী মিরাজ মাহমুদ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন