বিভিন্ন সময় কুরিয়ারে করেই অস্ত্রের চালান পাঠাতেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় নানা রকমের পণ্যের ক্যারেটে থাকতো অবৈধ অস্ত্র। আমের মৌসুমে তো কথাই নেই! এ কারণে এজেআর ট্রান্সপোর্ট লি. এর মালিক বিশ্বস্ততার কারণে মো. বাসির আলীর (৪৫) সঙ্গেও বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলেন। প্রতি চালানের জন্য তাকে দেয়া হতো অতিরিক্ত কমিশন। বাসির আলীকে চক্রের অঘোষিত সদস্যও বানিয়ে নেন মো. জানিবুল ইসলাম জোসি (৩৫)। তবে এবার অস্ত্রের চালান নিজে ডেলিভারি দিতে এসে শেষ রক্ষা হয়নি।
সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে ডিবির ডেমরা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আজহারুল ইসলাম মুকুলের (এডিসি) নেতৃত্বে একটি দল তাদেরকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, ৮ রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। জোসি চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
আজ দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ভারতের সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য রাজধানীতে নিয়ে আসে এই চক্র। কয়েক বছর ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে আসছিলো তারা। এই অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় মামলা হয়েছে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জ থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানা গেছে।
ডিবি সূত্র জানায়, জোসির বিরুদ্ধে রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জে চারটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে রাজশাহী রেলওয়ে থানায় অস্ত্র মামলা, ২০১৮ সালে দুটি বিস্ফোরক মামলা চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানায়। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অস্ত্র মামলার আসামি জোসি। এই চক্র বিভিন্ন কুরিয়ারে নানা কৌশলে অস্ত্র পাঠাতো।
এডিসি আজহারুল ইসলাম মুকুল জানান, অস্ত্রের গ্রহীতাকে আমরা খুঁজছি। তবে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে তারা কিভাবে অতীতে কুরিয়ারে অস্ত্রের চালান পাঠিয়েছেন। বাসির আলীও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে তার কুরিয়ারের মাধ্যমে চালান পাঠানোর কথা।
অন্যদিকে, ডিবির অন্য আরেকটি অভিযানে সোমবার রাতে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে অজ্ঞান ও মলম পার্টির ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত কমিশনার। গ্রেফতার হলেন মো. মাসুদ মিয়া ওরফে মাসুদ রানা, মো. সুমন কারাল ওরফে সুমন ফকির, মো. শাহিন ওরফে শামিম গাজী, শাওন ও মো. সজল। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯০টি চেতনানাশক ট্যাবলেট, অজ্ঞান ও মলম পার্টির কাজে ব্যবহৃত মধুর কৌটা, দুটি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, এ চক্রটি অটোরিকশা চালক, মোটরসাইকেল চালক, প্রাইভেটকার চালক ও যাত্রীদের সু-কৌশলে মধুর সঙ্গে চেতনানাশক ট্যাবলেট মিশিয়ে বিস্কুট, কলা, চা, জুস ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবারের মাধ্যমে খাইয়ে দামি গাড়ি ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিত।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন