কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড় মন্দিরে কোরআন রেখে বিএনপি দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি।
গতকাল শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত 'কৃষক বাঁচাও-দেশ বাঁচাও' দিবস পালন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হানিফ বলেন, বাংলাদেশের ৬০ ভাগেরও বেশি মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও কৃষিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার সরকার কৃষকদের গুলি করে হত্যা করেছে। জামালপুরের সরিষাবাড়িতে ১৭ জন কৃষককে জীবন দিতে হয়েছে। ১৯৯১ থেকে '৯৬ সালে ক্ষমতায় ছিলেন। কৃষকদের হত্যা করেছেন। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেও সার, বিদ্যুতের জন্য মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিলো। জননেত্রী শেখ হাসিনা সারের সুষম বণ্টন করে কৃষি খাতকে ঢেলে সাজিয়েছেন। বেগম মতিয়া চৌধুরী কৃষিমন্ত্রী ছিলেন, কৃষি খাতের উন্নয়নে তিনি গোটা বিশ্বে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ নম্বর দেশ, সবজি রফতানিতে তৃতীয়। মিষ্টি পানির মাছ রফতানিতেও আমরা চতুর্থ। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে আজ বাংলাদেশ গোটা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিলো। সাড়ে ৭ কোটি মানুষ দু'বেলা খাবার খেতে পারতো না। আজ দেশে ১৬ কোটি ৮২ লাক মানুষ। দেশের ১ লাখ হেক্টরের বেশি জমি আবাসনে চলে যায়। তবুও আজ শেখ হাসিনার কারণে মানুষ তিন বেলা খেতে পারে। এই সফলতাগুলো মির্জা ফখরুল সাহেবরা দেখেন না। তাদের মধ্যে ঈর্ষা কাজ করে।
মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে হানিফ বলেন, বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল গেলো কয়েক বছর ধরে এক ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছেন। দেশ শেষ হয়ে গেছে। কোথায় শেষ হয়ে গেছে? একটা সেক্টরও দেখাতে পারবেন না যে আপনাদের সময়ে উন্নয়ন হয়েছে। তিনি ভাঙা রেকর্ড বাজানোর জন্য প্রায় প্রতিদিনই প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করেন। তার ভাঙা রেকর্ড প্রতিদিন বাজে। তিনি বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনার পেছনে আওয়ামী লীগ দায়ী। এর আগের দিন বললেন, কুমিল্লায় গ্রেফতার করা ইকবালকে নিয়ে জজ মিয়া নাটক করতে যাচ্ছে সরকার। সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় হামলা হয়েছিলো। পৈশাচিক বর্বর হামলায় শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়া হলো না। পরে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার জজ মিয়াকে নিয়ে আসলেন। পকেটমার জজ মিয়া নাকি গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। মিথ্যা নাটক দিয়ে পাপকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। মির্জা ফখরুলের স্বীকারোক্তিতে সত্য বেরিয়ে এসেছে।
আওয়ামী লীগের এ সিনিয়র নেতা বলেন, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে তারা কষ্ট পান। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অঙ্গপ্রদেশ হিসেবে দেখতে চান। বিএনপির দিলের মধ্যে পাকিস্তান আছে। দেশের উন্নয়ন তাদের জ্বালা হয়। দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করার জন্য বহু চেষ্টা করেছেন। ২০১২-১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য সারাদেশে আগুন নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছেন। ২০১৪ সালে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়ে পরে প্রতিহত করার জন্য সাধারণ মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। ২০১৫ সালে পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। লক্ষ্য ছিলো একটাই শেখ হাসিনার উন্নয়ন, অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা, শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটানো। এদেশের বাংলার জনগণ শেখ হাসিনার সঙ্গে আছে, বাংলার মানুষ আওয়ামী লীগের পাশে আছে বলে আপনাদের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।
হানিফ বলেন, এবার কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড় মন্দিরে প্রতিমার পাশে আপনারা কোরআন রেখে আসলেন। এরপর দিন সারাদেশে বিএনপি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করেছেন। সেই মন্দিরে ভাঙচুর হয়েছে, তার জের ধরে চাঁদপুর নোয়াখালীতে ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে। ঘটনায় জড়িত ইকবাল গ্রেফতার হয়েছে। সে স্বীকারোক্তি দিয়েছে এর পেছনে শীর্ষ স্থানীয় যুবদল বিএনপির কাউন্সিলরদের নাম এসেছে। এরপরও নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন।
দেশের ধর্মীয় নেতাদের প্রতি আহবান জানিয়ে হানিফ বলেন, কুমিল্লায় মন্দিরে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় বিএনপি জড়িত এটা এখন প্রমাণিত। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য পবিত্র কোরআান শরীফের অবমাননা করতেও তারা পিছপা হয়নি। তাই বিএনপির প্রতি আপনারা ধিক্কার জানান, প্রতিবাদ করুন।
তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলার পর তারা ভেবেছেন পার পেয়ে যাবেন। ২১ আগস্ট হামলার মূলহোতা তারেক রহমান লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি ধর্মকে ব্যবহার করে হীন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। কুমিল্লার ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। মিথ্যাচার করে পার পাবেন না। ধর্মকে ব্যবহার করার মাশুল দিতে হবে।
হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান সকলে মিলে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। যারা সাম্প্রদায়িক তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হতে পারে না। এখনো তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। এদেরকে চিহ্নিত করে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। এসময় তিনি সাম্প্রদায়িক বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধের জন্য নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষক লীগ সভপতি সমীর চন্দ্র। অলোচনা সভার সঞ্চালনা করেন এ্যাডভোকেট শামীমা শাহরিয়ার এমপি।