কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রয়াত বাবার শ্রাদ্ধ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পিকআপ চাপায় ৫ ভাই নিহতের ঘটনায় ঘাতক চালক সাইফুলকে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। শুক্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গণমাধ্যমের কাছে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, নিহতদের কেউই গ্রেপ্তারকৃত চালক সাইফুলের পূর্বপরিচিত নন। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও ২ বছর ধরে পিকআপ ও চান্দের গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার পর পিকআপ মালিকের নির্দেশে পালিয়ে থাকার উদ্দেশে আত্মোগোপনে যান সাইফুল। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, ঘটনার সময় তারেক ও রবিউল নামে দু’জনকে নিয়ে চকরিয়া থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে সবজি বোঝাই পিকআপ নিয়ে রওনা দেন সাইফুল। তারেক পিকআপের মালিক মাহমুদুল করিমের ছেলে এবং রবিউল তার ভাগ্নে। কুয়াশার মধ্যেও দ্রুত সবজি ডেলিভারির উদ্দেশ্যে ৬৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিতে পিকআপ চালাচ্ছিলেন সাইফুল।
কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ৯ ভাই-বোনকে দেখতে না পেরে তাদের চাপা দেন সাইফুল। এরপর তিনি পিকআপ থেকে নেমে নিহতদের দেখতে এলেও মালিকের ছেলে তারেকের নির্দেশে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
পরবর্তীতে চালক সাইফুল পিকআপ মালিককে ফোন করে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান। গাড়িটির মালিক তাকে পিকআপটি কোনো এক স্টপেজে রেখে লোকাল বাসে করে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী সাইফুল ডুলাহাজরায় পিকআপটি রেখে বাসে করে চকরিয়ায় গিয়ে মালিকের সঙ্গে দেখা করেন।
এ সময় পিকআপের মালিক মাহমুদুল তাকে অন্তত এক বছর আত্মগোপনে থাকার পরামর্শ দিলে তিনি প্রথমে বান্দরবানের লামার রাবার বাগানে আত্মগোপনে যান। পরে জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে অন্যত্র আত্মগোপনের উদ্দেশে ঢাকায় আসেনে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঘন কুয়াশার মধ্যে চকরিয়ায় মহাসড়কের ডুলাহাজারার মালুমঘাটে রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগামী পিকআপের চাপায় চার ভাই ঘটনাস্থলে নিহত হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর আরেক ভাইয়ের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় তাদের আরও দুই ভাই ও এক বোন আহত হন।
অপরদিকে মারা যাওয়ার একদিন অতিবাহিত হলেও তাদের পরিবারে কান্নার রোল পড়েছে। কাউকে সান্ত্বনা দিয়ে থামানো যাচ্ছে না। পুরো এলাকাজুড়ে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এতবড় দুর্ঘটনা পুরো এলাকার মানুষকে হতভম্ব করেছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা তাদের বাবাদের খুঁজে ফিরছে।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক