ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষায় ডায়রিয়ার জীবাণু নেই বলে দাবি করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। যেসব এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি, সেখানকার পানি পরীক্ষা করেছে ঢাকা ওয়াসা। এরপরেও জীবাণুকে নিশ্চিন্ন করতে পানিতে ক্লোরিনের মাত্রা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।
আজ ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত 'নগরবাসীর চাহিদ-ঢাকা ওয়াসার সক্ষমতা' শীর্ষক ‘ডুরা সংলাপে’ তিনি একথা বলেন। ডুরা সভাপতি রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত সংলাপ সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শাহেদ শফিক।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেকেই ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিকে দোষারোপ করছে।
এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে তাকসিম এ খান বলেন, আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে আমাদের কয়েক দফা যোগাযোগ হয়েছে। ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়লেই ১০টি এলাকার ঠিকানা তারা আমাদের দিয়েছিল, সঙ্গে সঙ্গে আমরা ওইসব এলাকার পানি ল্যাবে টেস্ট করাই। সেই ল্যাব টেস্টে আমরা কোন জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া পাইনি। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে আইসিডিডিআরবিকে জানিয়েছি।
তিনি বলেন, পানিতে যদি ওবা কোনও জীবাণু থাকে, সেটি যাতে ধ্বংস হয়ে যায় সেজন্য আমরা ক্লোরিন দিয়ে থাকি। অনেক সময় ক্লোরিন পাইপের শেষ মাথা পর্যন্ত যায় না। আমরা ওই বিশেষ স্থানগুলোতে ক্লোরিন বাড়িয়ে দিয়েছি। এই ডায়রিয়ার সঙ্গে আমাদের ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে যা পেয়েছি, তাতে কোনও সম্পৃক্ততা সরাসরি নেই। ক্লোরিন মেশানোর কারণে পানিতে কিছুটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এই গন্ধ দূর করতে আমরা আন্ডারগ্রাউন্ড পানি ও আমাদের শোধন করা পানির মিশ্রণ করে সরবরাহ করি।
ওয়াসার এমডি বলেন, পানি খুবই প্রয়োজনীয়। জীবনধারণের অংশ হচ্ছে পানি। পৃথিবীতে প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ খাওয়ার পানি থেকে বঞ্চিত। কাজেই আমরা সেই বিলিয়ন মানুষের বাইরে আছি। পৃথিবীতে যদি আবারও কোনো সংঘাত হয়, তাহলে এই সংঘাত পানি নিয়েই হবে। তেল আর গ্যাসের থেকে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় পানি নিয়ে। পৃথিবীর বহু দেশের রাজধানী পানির অভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। আমাদের এখানে অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ আছে। পানিরও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ আমরা সমাধান করতে পারছি। সাউথ এশিয়ায় পানির সূচকে আমরা অনেক ভালো অবস্থানে আছি।
পানির জন্য আগের মতো হাহাকার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে চাহিদার তুলনায় আমরা বেশি পানি উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছেন। কাজেই ঢাকা শহরে পানির হাহাকার বা অভাব এখন নেই। আমরা সবাইকে পানি দিতে পারছি। এখন ২৪ ঘণ্টা পানি আছে। দিন শেষে আমাদের কিছু সিস্টেম লস হয়। আমাদের পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ সিস্টেম লস আছে, যা খুবই নগণ্য। অনেক সময় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ময়লা পানি ঢুকে পড়ে।
পানি ফুটিয়ে পান করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তাকসিম এ খান বলেন, ওয়াসার পানি নিরাপদে ট্যাংকি পর্যন্ত দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। বাসার ট্যাপ পর্যন্ত নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের না। সেজন্য আমরা বলবো আপনারা পানি ফুটিয়ে খান। এছাড়া পানিতে কোনো সমস্যা হলে- আমরা তিন স্থান থেকে পানি নিয়ে পরীক্ষা করি। একটা হচ্ছে আমাদের পাম্প, দ্বিতীয় হচ্ছে যে এলাকায় সমস্যা ওই এলাকার লাইন, আর তৃতীয় হচ্ছে বাসার লাইন থেকে।
পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে সবকিছু আমরা জানিয়েছি, এখন সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়াসা সচিব প্রকৌশলী শারমিন হক আমীর, পরিচালক (কারিগরী) একেএম শহিদ উদ্দিন, বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী উত্তম কুমার রায়, প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা নিশাত মজুমদার, ডুরা’র সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক নিলয় মামুন প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত