রংপুরে যাত্রীবাহী দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক বাসের চালকসহ আটজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধ-শতাধিক। রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জে খারুভাজ সেতুর কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে পাঁচজন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিনজন মারা গেছেন।
নিহতরা হলেন-তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের পলাশবাড়ি গ্রামের জোয়ানা বাসের হেলপার বিনোদ সেনের পুত্র ধনঞ্জয়, একই উপজেলার সয়ার ইউনয়িনের কাজিপাড়া গ্রামের কছিম উদ্দিনের ছেলে আনিছুর রহমান, একই উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের ডাঙ্গীরহাট গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে আনোয়ার হোসেন ও নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কুন্দল পূর্বপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে মহসিন হোমেন সাগর, নীলফামারীর জলঢাকা এলাকার নয়ন, সৈয়দপুরের জুয়েল রায়হান, মুছা মিয়া ও ইসলাম পরিবহনের চালক মাহাবুব। তার বাড়ি নীলফামারী জেলায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের শলেয়াশাহ খারুভাজ সেতুর কাছে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা ঠাকুরগাঁওগামী জোয়ানা পরিবহনের সাথে ঠাকুরগাঁও থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ইসলাম পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে পাঁচজন এবং রমেক হাসপাতালে তিনজন মারা যান। আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে আহতদের আহাজারি, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
এদিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, আহতদের আহাজারিতে রমেক হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। আহতদের স্বজনরা তাদের রোগীর চিকিৎসার জন্য ছোটাছুটি করছেন। দুই বাসের বেপরোয়া গতি এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। দুই চালকই রং সাইটে গাড়ি চালাচ্ছিল। এমনটা অভিযোগ করলেন আহত কয়েকজন রোগী। নিহতের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
দুই বাসের সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়াকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক আসিফ আহসান আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান। আহতদের খোঁজ-খবর নেন। এসময় তিনি আহতদের চিকিৎসায় এবং নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার কথা বলেন।
এদিকে সোমবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে আহত স্বজনদের আহাজারি। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তারাগঞ্জের বাসিন্দা সকারু চন্দ্রের পুত্র নিত্যানন্দ রংপুর নগরীতে অটোরিকশা চালান। রিকশা চালানো শেষে রাত ১১টার দিকে জোয়ানা পরিবহনে বাড়িতে রওনা দেন। দুর্ঘটনায় তার পায়ে এবং মাথায় আঘাত লেগেছে। তিনি বলেন, দুটি গাড়িই বেপরোয়া গতিতে চলায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তারাগঞ্জের কালী মন্দির এলাকার হরি চন্দ্রের পুত্র ডালিম। তিনিও রাতে রিকশা চালিয়ে বাসে করে তারাগঞ্জের বাড়িতে ফিরছিলেন। তিনিও মারাত্মক আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, জোয়ানা গাড়ির সুপারভাইজার একাধিকবার ড্রাইভারকে গাড়ি ধীরে চালাতে অনুরোধ করেন। কিন্তু ড্রাইভার বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোয় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি মনে করেন। ঠাকুরগাঁও জেলার রানিসংকৈল থেকে মোস্তফা মিয়া ইসলাম পরিবহনে ঢাকা যাচ্ছিলেন। তিনিও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন।
একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রুহুল আমিন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি থেকে ঢাকায় রিকশা চালাতে যাচ্ছিলেন। পথে দুর্ঘটনায় তার ঢাকা যাওয়া হলো না। তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তিনি দুর্ঘটনার জন্য বেপরোয়া চালকদের দায়ী করলেন। আহতদের হাসপাতালের ১৫, ৩১, ১৯, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুই বাসের সংঘর্ষে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আটজন নিহত হয়েছেন। রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জের খারুভাজ সেতুর কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আহত হয়েছেন ৩৫ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৫ জন। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মাহবুব মোর্শেদ আটজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মাহাবুব নামে একজন বাসের চালক মারা গেছেন। অন্য বাসের চালক পলাতক রয়েছে। বাস দুটি জব্দ করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই