পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূলের দিকে তীব্র বেগে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। মঙ্গলবার ভোররাত নাগাদ এটি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সাগর উত্তাল থাকায় ৫ থেকে ৮ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছাস হতে পারে। এর প্রভাবে পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দরে ৬ নম্বর এবং বরিশাল নদী বন্দরে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত জারী করা হয়েছে। সকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সারা দেশে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বরগুনা ও পাথরঘাটা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। অবিরাম বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে পানি জমেছে। ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে দক্ষিনের লাখ লাখ মানুষ। বিপদগ্রস্থ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু সংখ্যক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার।
বরিশাল আবহওয়া অফিসের প্রধান মো. বশির আহমেদ জানান, আজ দুপুরে সব শেষ খবর অনুযায়ী সিত্রাং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো। এর ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার। যা দমকা ও ঝড়ো আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্নিঝড়টি আগামীকাল ভোররাত নাগাদ খেপুপাড়া (কলাপাড়া) উপকূলে আঘাত হানতে পারে। উপকূলীয় এলাকায় ৫ থেকে ৮ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছাস হতে পারে। ঘূর্নিঝড়ের কারনে রবিবার সন্ধ্যা থেকে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। বেলা ১২টা পর্যন্ত ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাত ১২টার পর পরিস্থিতির আরও অবনতির আশংকা করা হয়েছে।
ভারী বৃষ্টির কারনে নগরীর সদর রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নিম্মাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বরগুনা এবং পাথরঘাটা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। আরও ভারী এবং অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
সম্ভাব্য দুর্যোগের আশংকায় পায়রা সমূদ্র বন্দরে ৭ নম্বর, মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৬ নম্বর এবং নদী বন্দর সমূহে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত জারী করা হয়েছে। নদীতে পানি থৈ থৈ করছে।
বরিশাল বিআইডবি্লউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, আজ সকাল ১০টার পর পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সারা দেশে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিআইডবি্লউটিএ।
নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় বরিশাল নদী বন্দরে কিছু যাত্রী আটকা পড়েছে।
ঘূর্নিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি) বরিশালের উপ-পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, দুর্যোগকালীন ঝূঁকি হ্রাস এবং মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করছে সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা। বিপদ সংকেতের পতাকাও টাঙানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
দুর্যোগের খবরে উদ্বিগ্ন উপকূলীয় লাখ লাখ মানুষ। তারা দুর্যোগ থেকে বাঁচতে সৃষ্টিকর্তার কৃপা কামনা করেছেন।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন-উল আহসান জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য বিভাগের ৬ জেলায় ৩ হাজার ৯শ’ ৭৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনগনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিপিপি’র স্বেচ্ছাসেবকরাও মাইকিং করছে। ইতিমধ্যে উপকূলের কিছু মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। গবাদী পশু ও সহায় সম্পদ রেখে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চায় না। তারপরও সন্ধ্যার মধ্যে বেশীরভাগ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার চেস্টা চলছে। ঘূর্নিঝড় আঘাত হানলে পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতার জন্য ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ