আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে যাত্রী সংকটে ভুগা দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলোতে অবশেষ যাত্রী চাপ বাড়ছে। রাজধানী সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে হাজার হাজার লঞ্চ যাত্রীকে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে ঈদে বাড়ি ফেরা ঘরমুখো মানুষের এসব চিত্র দেখা যায়। সাপ্তাহিক শেষ দিনের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং গার্মেন্টস কারখানাগুলো ছুটি হাওয়ায় এ ভিড় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সদরঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা।
ঈদের ছুটি উপলক্ষে নিয়মিতভাবে চলাচলকারী লঞ্চগুলো পাশাপাশি স্পেশাল ট্রিপ দেয়া লঞ্চগুলোও পূর্ণ যাত্রী নিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দ্যেশ্যে ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে। কিছু দিন আগেও যেখানে যাত্রীর অভাবে নির্দিষ্ট সময়ে লঞ্চ ছাড়তো না সেখানে এখন লঞ্চগুলো পূর্ণ যাত্রী নিয়ে ঘাট ছাড়ছে। খালি নেই লঞ্চগুলোর কেবিন, ডেকেও দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। বিশেষ করে বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এদিন বিকাল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামার মুহূর্তে যাত্রী চাপ বাড়তে থাকতে থাকে। যাত্রীদের বেশিরভাগই বরিশালগামী লঞ্চে ভিড় করছেন। এছাড়াও পটুয়াখালী বগা ইলিশা এসব রুটেও যাত্রী আসতে শুরু করেছে। এদিকে যাত্রী চাপ যেনো সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও বেড়েই চলছে।
সদরঘাটের একাধিক লঞ্চের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লঞ্চগুলোতে ডেকের যাত্রী সংখ্যাই বেশি। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোই লঞ্চে যাচ্ছে। সড়ক পথের চেয়ে তুলনামূলক ভাড়া কম ও যাত্রাপথ আরামদায়ক হওয়াতেই যাত্রী চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে টিকিট বিক্রির চাপে লঞ্চ সংশ্লিষ্ট কেউ কথা বলারই সময় পাচ্ছেন না।
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আহমেদ ঈদ করতে পরিবার নিয়ে পটুয়াখালীতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। তিনি জানান, এম ভি এ আর খান লঞ্চের টিকিট পেয়েছি। তবে ঘাটে অনেক লোকের ভিড়। লঞ্চে ঠিকভাবে উঠতে পারলেই হয়। একা হলে সমস্যা ছিল না, পরিবার নিয়ে এতো ভিড়ের মধ্যে লঞ্চে উঠতে অনেক কষ্ট।
চাঁদপুরগামী লঞ্চ যাত্রী রাজিব রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একবারের ঈদ যাত্রা আগের থেকে অনেক নিরাপদ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বিক বিষয়ে তদারকি করছে আমাদের। তবে আমাদের ড্রেকের ভাড়া নিয়মিত ১৫০ টাকা থাকলেও লঞ্চ মালিকরা ১৮০ টাকা নিচ্ছে। অন্যদিকে সিটের ভাড়া ২০০ টাকা থাকলে সেখানে তারা ২৫০ টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
বরিশালগামী কীর্তনখোলা ১০ লঞ্চের যাত্রী মোহাম্মদ রাসেল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লঞ্চে উঠার সময় তার ব্যাগ থেকে সোনার চেইন এবং কিছু গহনা চুরি হয়েছে বলে পুলিশের নিকট অভিযোগ করতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, ব্যাগ থেকে গহনা চুরি হবে আমি ভাবতে পারছি না। এতো ভিড়ের মধ্যে শুধু আমার বাচ্চাদের সুন্দরভাবে লঞ্চে উঠিয়ে দিয়েছে।
অ্যাডভেঞ্চার-৫ লঞ্চের চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, এবারের ঈদে আজকেই সবচেয়ে বেশি যাত্রী হয়েছে। তবে গত ঈদের মতো যাত্রী এখনও দেখছি না। আশা করছি কাল যাত্রী চাপ আরও বেশি বাড়বে।
বিআইডব্লিউটিএর সদরঘাট শাখার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান জানান, বিকাল ৪টা থেকে এখনো পর্যন্ত সদরঘাটের বিভিন্ন রুটে ৮২টি লঞ্চ আগমন এবং ৮০টি লঞ্চ নির্গমন করেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কিংবা যাত্রী নেওয়ার কোনো অভিযোগ পায়নি আমরা।
লালবাগ জোনের এডিসি মুহিত কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা যাত্রীদের সমস্যা, জননিরাপত্তা, অভিযোগ, সচেতনতা, বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আমাদের সর্বমোট ২১টি টহল টিম পল্টন এবং ভিতরে- বাহিরে মিলে কাজ করে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে পুলিশ, নৌ- পুলিশ, রেপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, আনসার, বিএনসিসির ১১ জন ক্যাডেটসহ ২৫০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছে।
সার্বিক বিষয়ে নৌ-পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম বলেন, যাত্রীদের ঈদযাত্রা সুন্দর ও সহজ করতে আমরা সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা সর্বদা যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকব। ঈদের সময়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা মাথায় নিয়ে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। যাত্রীরা যেন এবারের ঈদ যাত্রা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে করতে পারেন সেই প্রত্যাশায় নৌ পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত