রাজধানীর চকবাজার পোস্তার এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে নজরুল ইসলাম (৫২) নামে এক ব্যবসায়ীর হাত ও পা বাঁধা রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুধবার ভোর রাত সাড়ে তিনটার দিকে ওই ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নজরুল ইসলাম নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার মৃত শামছুল হকের ছেলে।
নিহতের ছোট ভাই তৌহিদুল ইসলাম তাপস বলেন, তার বড় ভাই নজরুল ইসলামের লালবাগের আলীনগর ‘নজরুল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ’ রয়েছে। পোস্তা এলাকায় একটি সপ্তম তলা ভবনের পঞ্চম তলার ভাড়া বাসায় স্ত্রী সুমী ও দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে থাকতেন।
তিনি বলেন, গত ১ ডিসেম্বর ভাবী সন্তানদের নিয়ে নরসিংন্দীতে আমাদের বোন ফরিদার বাড়ি বেড়াতে যান। ঢাকায় ওই বাসায় ভাই একাই ছিলেন। গত সোমবার রাত থেকে ভাইকে ফোনে পাচ্ছিলেন না কেউ। সব জায়গায় খোঁজ খবর নিয়ে না পাওয়ায় পরদিন মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) কলেজ পড়ুয়া ছেলে সুমিত রাতে ঢাকায় চলে আসে। পরে তাকে নিয়ে লালবাগ ও চকবাজার থানায় জিডি করতে যাই। এর আগে ভাতিজা সুমিত বাসায় গিয়ে বাহির থেকে তালা খুলে ভিতর থেকে এনআইডি কার্ড নিয়ে আসে। পরে রাত আনুমানিক ১টা থেকে দেড়টায় দিকে বাসায় যায় ভাতিজা। এ সময় তার সাথে তার এক বন্ধু ছিল।
বাসার যাওয়ার পর ভাতিজা ফোন করে জানায়, ভাইয়ের মরদেহ ঘরের ভিতরে রয়েছে। দ্রুত সেখানে গিয়ে দেখতে পাই তিনটি রুমের মধ্যে ভিতরের রুমে হাত ও পা বাঁধা, লুঙ্গি দিয়ে বাঁধা মুখ ও লিঙ্গ কাটা অবস্থা পড়ে আছে। মাথায়ও আঘাত ছিল। রুম এলোমেলো। পরে আশপাশের ফ্লাটের লোকজনের সহযোগিতায় পুলিশকে সংবাদ দেয়া হয়। পুলিশ এসে মরদেহটি উদ্ধার করে ঢামেক মর্গে পাঠান।
ছেলের বরাত দিয়ে নিহতের ভাই আরও বলেন, ওই বাসার চাবি দু’টি, একটি তার বাবার কাছে ছিল, আরেকটি চাবি তাদের কাছে ছিল। কে বা কাহারা বাসায় ঢুকে তার ভাই নজরুলকে হত্যা করেছে তা তারা জানতে পারেননি। বাসায় একটি সুটকেসে ভাবীর রাখা ৪০ হাজার টাকা ছিল। সেটি কেটে নিয়ে গেছে। এছাড়াও দু’টি মোবাইল পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে ওই গুলোই নিয়ে গেছে হত্যাকারীরা।
তিনি আরও জানান, বাড়ির দারোয়ানও ঠিক মতো কোনো তথ্য দিতে পারেনি। দারোয়ান আমাদের জানিয়েছেন, ‘গাজীপুরে তার ব্যবসায়িক মালামাল সন্ত্রাসীরা আটকে রেখেছে। ভাই নাকি সেখানে গিয়েছে’। যদি এমনই হতো, তাহলে ভাইয়ের ওয়ার্কসপের ম্যানেজার বিষয়টি অবশ্যই জানতো। আমরা ম্যানেজারের সাথে কথা বলেছি, সে জানিয়েছে, ভাই সোমবার রাতে ওয়ার্কসপ থেকে বের হয়েছে, তার সাথে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। আসলে কোনটা সঠিক কিছু বুঝতে পারছি না।
দারোয়ানের ভাষ্যমতে, ভাই যদি গাজীপুর চলে গিয়ে থাকে, তাহলে বাসায় তার লাশ কিভাবে আসল? বাহির হতে তিনি দেখেছেন, কিন্তু ভিতরে ঢুকতে দেখনি। এছাড়াও সে বাসায় সিসিটিভি ক্যামেরাও রয়েছে।
তিনি বলেন, হত্যাকারীরা যেই হোক, তারা বাসায় এসে ভাইকে হত্যা করে আমাদেরই ব্যবহৃত তালা বাহির দিয়ে লাগিয়ে চলে গেছে।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা সংবাদ পেয়ে বুধবার ভোরে ওই বাসা থেকে হাত-পা-মুখ বাঁধা ও লিঙ্গ কাটা অবস্থায় ওই ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করি। পরে মরদেহ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত