২৭ এপ্রিল, ২০২১ ১১:১৩

শপিং মলে উপচে পড়া ভিড়

জয়শ্রী ভাদুড়ী

শপিং মলে উপচে পড়া ভিড়

দুই সপ্তাহের লকডাউন শেষে দোকানপাট খুলতেই ভিড় জমেছে মার্কেট, শপিং মলগুলোতে। একদিকে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানায় আগ্রহ কমছে। নগরীর মার্কেট ঘুরে ছবি তুলেছেন রোহেত রাজীব ও জয়ীতা রায়

দোকানপাট-শপিং মল খুলতেই রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। লকডাউন চলমান থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি, মোটরসাইকেল চলাচলে বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে যানজট। ঈদের বেচাকেনায় ক্রেতা-বিক্রেতার খুশিতে অবেহলায় স্বাস্থ্যবিধি।

গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ‘লকডাউনে’ দোকান ও বিপণিবিতান বন্ধের সিদ্ধান্ত ছিল। আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ থাকলেও গত রবিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল সরকার। কিন্তু এরপর আবার দোকান খোলা রাখার সময় বাড়িয়ে রাত ৯টা করা হয়। মার্কেট খুলতেই ঈদের কেনাকাটা শুরু করেছেন ক্রেতারা। এই কেনাকাটার ভিড়ে উধাও স্বাস্থ্যবিধি। মুখে মাস্ক নেই ক্রেতা-বিক্রেতা কারোরই। গাদাগাদি করে মার্কেটগুলোতে দরদাম করছে মানুষ। ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ, মৃত্যুহারে দেশের করোনা পরিস্থিতির নাজুক হলেও তা যেন নাড়া দিচ্ছে না সাধারণ মানুষকে। ভিড় ঠেলে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে বিভিন্ন দোকানে ছুটছেন ক্রেতারা। গাদাগাদি করে কার আগে কে কিনবেন পছন্দের পোশাক বা প্রয়োজনীয় সামগ্রী, চলছে তারই প্রতিযোগিতা।

গতকাল নিউমার্কেট এলাকা ফুটপাথের ভ্রাম্যমাণ দোকান ও বিপণিবিতানে দেখা যায় বিপুল ক্রেতা সমাগম। নূরজাহান মার্কেটের গেট দিয়ে সারি সারি ঢুকছে মানুষ। সরু গলিতে গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগিয়ে পার হতে হচ্ছে। বদ্ধ জায়গায় শত শত মানুষ অলিগলিতে ঘুরছে মাস্ক ছাড়া। বিক্রেতার মুখেও নেই কোনো মাস্ক। কেউ কিনছেন ফতুয়া, কেউ কিনছেন শার্ট। ঈদ উপলক্ষে নতুন পোশাক দোকানে টানিয়ে ডাকাডাকি করছেন বিক্রেতারা। বাহারি নামের পোশাক দেখতে ও কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। ছেলের সঙ্গে মার্কেটে এসেছিলেন ফরিদ হোসেন। তিনি বলেন, ছেলের জন্য ঈদ উপলক্ষে একটা পাঞ্জাবি কিনতে এসেছি। আবার যদি লকডাউনে মার্কেট বন্ধ করে দেয় সে আশঙ্কায় আজকেই ছেলেকে নিয়ে আসলাম। করোনার ঝুঁকি আছে কিন্তু প্রয়োজনীয় সামগ্রী তো কিনতে হবে। মাস্ক পরেছি, পকেটে স্যানিটাইজার আছে।

বেলা বাড়তেই নিউমার্কেটে বাড়তে থাকে ক্রেতার চাপ। ফুটওভারব্রিজ পার হতেই রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি অবস্থা। একে তো মানুষের ভিড়। তার মধ্যে অর্ধেক জায়গা দখল করে পসরা সাজিয়ে বসেছে হকার। অনেকে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে তাদের পণ্য দেখতে শুরু করলেই ভিড় আরও বাড়ছে। তিন ফুট দূরত্ব তো দূরের কথা তিন সেন্টিমিটারের দূরত্ব নেই মানুষের চলাফেরায়। মার্কেটের প্রবেশপথে জীবাণুনাশক টানেল থাকলেও তা ব্যবহারে চরম অনীহা দেখা যায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। আবার বিপণিবিতানের ভিতরে মাস্ক ছাড়া দেখা যায় বিক্রয় কর্মীদেরও।

হাসান গার্মেন্টেসের বিক্রয় কর্মী ফিরোজ আলী বলেন, ‘সকাল সাড়ে নয়টায় দোকান খুলেছি। ক্রেতার প্রচণ্ড চাপ। মাস্ক পরে কতক্ষণ থাকা সম্ভব, গরম লাগে। মাস্ক পরে কথা বললে মানুষ দাম বুঝতে পারে না। করোনার ঝুঁকির বিষয়ে বললে বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। আমাদের করোনা হবে না। আর হলেও করার কিছু নাই। ব্যবসা তো করতে হবে। ঈদের আগে লকডাউন দেওয়ায় এমনিতেই আমাদের ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের ক্ষতিই এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এ বছর আবার লকডাউন।

নগরীর নয়া পল্টনের সিটি হার্ট শপিংমলে দেখা গেছে মানুষের ভিড় বাড়ছে। দুপুরের দিকে এ ভিড় আরও বাড়তে থাকে। দীর্ঘদিন শপিং মলগুলো বন্ধ থাকায় নগরবাসী কেনাকাটা করতে পারেনি। সে কারণে মার্কেট খুলতেই ভিড় করেছেন। শান্তিনগর থেকে কেনাকাটা করতে এসেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাঈদ হোসেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে অনেকদিন দোকানপাট বন্ধ ছিল। আমরাও কেনাকাটা করতে পারিনি। সামনে ঈদ, তখন মানুষের ভিড় আরও বাড়তে পারে। তাই আজ মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছি।

মার্কেটের দোকানি সামছুল ইসলাম বলেন, সরকারের নির্দেশনায় এতদিন মার্কেট বন্ধ ছিল। দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, মালামাল পাইকারি কেনা সব মিলিয়ে আমরাই অসহায় অবস্থায় ছিলাম। গতকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে খোলা হয়েছে। সামনে ঈদ, মানুষ কেনাকাটা করতে আসছে। যথেষ্ট চাপ রয়েছে। বিক্রিও যথেষ্ট ভালো। বিপণিবিতান খোলার অনুমতি দেওয়া হলেও বাইরে বের হতে আগের মতোই ‘মুভমেন্ট পাস’ লাগবে বলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে গতকাল ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা কাউকেই মুভমেন্ট পাসের জন্য আটকাতে দেখা যায়নি। সকালে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, এলিফেন্ট রোড, নিউমার্কেট এলাকার বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘লকডাউন তুলে নেওয়া হচ্ছে এটা ঠিক নয়। কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হচ্ছে। আমরা পরামর্শ দিয়েছি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খুলতে। গাড়িতে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে বলেছি। সামনে ঈদ আসছে। আমাদের বাড়ি ফেরার বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। নইলে আমাদের সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর